ঢাকা : ঢাকা ও চট্টগ্রামে গণপরিবহন হিসেবে চলাচলকারী বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১২ পয়সা বাড়ছে। শুধু গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়লেও ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ছে। বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭২ পয়সা এবং মিনিবাসে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬২ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া বাড়ছে ৬০ শতাংশ।
আজ বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে পারেন। সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক এ প্রতিবেদককে জানান, বৃহস্পতিবার গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ কমিটির বৈঠক হবে মন্ত্রণালয়ে। ভাড়া কত বাড়ানো হচ্ছে তা মন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সচিব।
তবে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সূত্রগুলো নিশ্চিত করছে, কিলোমিটারে ১২ পয়সা বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিনিবাস ও বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ ও ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ ও ৮ টাকা করা হতে পারে। বিআরটিএর ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি ভাড়া বৃদ্ধির যে সুপারিশ করেছে তাকে অযৌক্তিক বলছেন যাত্রী প্রতিনিধিরা।
পরিবহন মালিকরা এখনও প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা করতে সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘দুই দফা বৈঠকের পর সরকার ১২ পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে। কিলোমিটারে ১৫ পয়সা ভাড়া না বাড়ালে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
গত ১ সেপ্টেম্বর গ্যাসের দাম ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করা হয়। তার আগেই গত ৩০ আগস্ট ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা দেন পরিবহন মালিকরা। সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাসভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ানো হয়।
বিআরটিএর হিসাবে রাজধানীতে
১০৩ রুটে গণপরিবহন হিসেবে চলাচলকারী বাসের সংখ্য ৬ হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ গ্যাসচালিত। আগে এই সংখ্যা প্রায় ৮০ ভাগ ছিল। গ্যাস পেতে লম্বা লাইন ও বাসের আয়ুষ্কাল বাড়াতে কয়েক বছরে অধিকাংশ বাস সিএনজি থেকে ডিজেলে রূপান্তর করা হয়। ডিজেলের দাম না বাড়লেও বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গে এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘২০১৩ সালে যখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল তখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ডিজেলচালিত বাসের মালিকরা আড়াই বছর ধরে লোকসান দিচ্ছেন। তাই গ্যাসচালিত বাসের সঙ্গে এবার ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ানো হচ্ছে।’
ভাড়া বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিআরটিএ ভাড়া নির্র্ধারণ করেছে একটি বাসে ২০ ভাগ আসন খালি ধরে। মিনিবাসে আসন ধরা হয়েছে ৩২টি। বাসে আসন ধরা হয়েছে ৪০টি। মিনিবাসে কারসাজি করে আসন বানানো হয় ৪২টি। বড় বাসে থাকে ৫০ এর বেশি। ঢাকায় কোনো বাসেই আসন খালি থাকে না। দাঁড়ানো যাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি ২৫ জন যাত্রী ধরে ভাড়া হিসাব করলেও যাত্রী থাকে ৫০ জন। ভাড়া না বাড়িয়ে বরং কমানো উচিত। তিনি অভিযোগ করেন, ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে মালিক প্রতিনিধি থাকলেও যাত্রী প্রতিনিধি না থাকায় যাত্রী স্বার্থ রক্ষা হয়নি।
বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) নুরুল ইসলাম জানান, ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি বাসের ১৭টি পরিচালনা ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, বাসের দাম ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদ ১১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা, বার্ষিক নিবন্ধন ফি ২২ হাজার টাকা, চালক-সহকারীর মাসিক বেতন মজুরি ৫০ হাজার টাকা, বছরে একবার ইঞ্জিন ওভারহোলিং বাবদ ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও পাঁচ বছরে একবার পুরো বাসের উন্নয়ন (রেনোভেশন) বাবদ ৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাসে আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। মবিল পরিবর্তন বাবদ মাসে ৫ হাজার ৪০০ টাকা, মবিল ফিল্টার, গ্রিজিং ও এয়ার ক্লিনার পরিবর্তন বাবদ ২ হাজার ২০০ টাকা, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৬ হাজার ১২০ টাকা ব্যয় ধরেছে কমিটি। ব্যাটারি পরিবর্তন বাবদ বছরে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, রাতের বেলা অধিকাংশ বাস রাস্তায় রাখা হলেও গ্যারেজ বাবদ বছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।
একে অবিশ্বাস্য ব্যয় বলেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কোনো বাসেই প্রতি বছর ইঞ্জিন ওভারহোলিং করা হয় না, রেনোভেশনও করা হয় না। এসব করা হলে ঢাকায় ফিটনেসবিহীন বাসই থাকত না। ঢাকায় চলাচলকারী বাসগুলোর প্রায় ৮০ ভাগের বয়স ১০ বছরের বেশি। এগুলোর ব্যাংক ঋণ শোধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবে খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, বাসের খরচ আরও অনেক বেশি। তিনি বলেন, যে পরিমাণ পরিচালনা ব্যয় দেখা হয়েছে, খরচ তার চেয়ে বেশি। বাস রাস্তায় রাখা হলেও গ্যারেজ খরচ বছরে ৬০ হাজার টাকার বেশি বলে দাবি করেন তিনি।
বাসের মতো বাড়ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চলাচলকারী সিএনজিচালিত ১৩ হাজার অটোরিকশার ভাড়াও। এসব অটোরিকশার ৯০ ভাগই মেয়াদ উত্তীর্ণ। প্রস্তাবে প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হচ্ছে। ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিটে ১ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা করা হচ্ছে।