রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪১:৪০

কে এই মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী?

কে এই মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী?

বিশেষ প্রতিনিধি : মাস্টারমাইন্ড ও মোস্টওয়ান্টেড তামিম চৌধুরী। বাংলাদেশি বশোদ্ভূত কানাডিয়ান। নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে গড়ে ওঠা জঙ্গি আস্তানায় শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে 'মোস্ট ওয়ান্টেড' জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী।

গুলশান হামলার 'হোতা' এই তামিম প্রায় তিন বছর আগে কানাডা থেকে দেশে আসেন। বাংলাদেশে আসার পর আর কানাডা ফিরে যায়নি। যোগাযোগ ছিল না  পরিবারের সঙ্গেও। তখন থেকেই জঙ্গিদের সংগঠিত করার মিশনে নামে তামিম। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, আর্থিকসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়। গত দুই বছরে জেএমবি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি নৃংশস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় তার নাম ওঠে আসে। তবে গুলশান হামলার আগে তার ব্যাপারে তেমন কোনো তথ্য জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে তার ব্যাপারে একের পর এক তথ্য পান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিখোঁজ ১০ তরুণের তালিকাতেও তার নাম দেখা যায়। পুলিশ বলছে, নতুন করে সংগঠিত জেএমবির অন্যতম নেতা তামিম। তার নেতৃত্বেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে জঙ্গিরা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাকে আইএসের বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলে দাবি করা হয়েছে।

গুলশান ও শোলাকিয়ার নৃশংস জঙ্গি হামলার অন্যতম মাস্টার মাইন্ড সে। কল্যাণপুরের জাহাজবাড়িতে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অপারেশনে আহত অবস্থায় আটক হওয়া রাকিবুল হাসান ওরফে রিগানের দেয়া তথ্যেও ওঠে আসে এই তামিম চৌধুরীর নাম। গত ২রা আগস্ট তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। অবশেষে গোপন সূত্রের খবরে তার আস্তানার খোঁজ পায় পুলিশ।

পুলিশের তদন্ত ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রাম সাদিমাপুরের প্রয়াত আবদুল মজিদ চৌধুরীর নাতি তামিম। আবদুল মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তামিমের বাবা শফিক আহমেদ চৌধুরী জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যান। পরিবারের সঙ্গে কানাডার উইন্ডসরে থাকতেন তামিম। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তিনি ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আসেন। এর পর থেকে নিখোঁজ।

মূলত দেশে ফেরার পর থেকেই তিনি জেএমবিকে নতুন করে সংগঠিত করতে শুরু করেন। জেএমবির নতুন এই ধারাটি হয়ে ওঠে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক। গত দুই বছরে ঢাকা, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে জেএমবিকে হত্যা ও হামলার মিশনে দেখা যায়। এভাবে বেশ কয়েকটি 'সফল' অভিযানের পর তারা গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার মতো বড় পরিকল্পনা করে।

এদিকে পুলিশ তামিমকে জেএমবি নেতা বললেও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিভিন্ন প্রকাশনায় দাবি করা হয়, তিনি সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক। এর ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও তাকে আইএস সমন্বয়ক হিসেবে উল্লেখ করেছে।

কানাডার পত্রিকা ন্যাশনাল পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী আইএসের কথিত 'বাংলার খিলাফত দলের প্রধান'। তবে তার সাংগঠনিক নাম শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ। তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে গেছেন। গত ১৩ এপ্রিল আইএসের কথিত মুখপত্র 'দাবিক'-এর ১৪তম সংখ্যায় আবু ইব্রাহিম আল-হানিফের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। এতে জানানো হয়, কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে শক্ত ঘাঁটি করতে চায় আইএস।

গত ২রা আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক পলাতক তামিম চৌধুরী ও মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেন। ওই সময় আইজিপি বলেন, গুলশান হামলার সময় তামিম দেশেই ছিল। বসুন্ধরার একটি বাসায় সে হামলার আগে জঙ্গিদের ব্রিফ করে। নিজেই জঙ্গিদের নিয়ে গুলশানে এসেছে। ওই জঙ্গিদের রিক্রুটও করেছে তামিম।

গতকাল (শনিবার) ভোরে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া বড় কবরস্থানের সেই জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন হিট স্ট্রং টুয়েন্টি সেভেন নামে অভিযান চালায় তারা। এ অভিযানে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়।
২৮ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে