নিউজ ডেস্ক : সিলেটের শেখঘাটের নাজমা আক্তার নামে এক মহিলাকে রাস্তায় মারধরের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো হৈচৈ পড়েছে। ফেসবুকের এক লিংক থেকে আরেক লিংকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। এ ঘটনায় নির্যাতনকারীকে প্রথমে ধরেও ছেড়ে দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর পুলিশ ফের তাকে খুঁজছে।
তবে, এ ঘটনায় সিলেটে পুলিশের কাছে অভিযোগ আসেনি। আর ঘটনার পরপর উভয়পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছায় পুলিশও দুজনকে ছেড়ে দিয়েছে। এ নিয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে তার বক্তব্য তুলে ধরেছে নির্যাতনকারী ওই ব্যবসায়ী তানভীর আহমদ তপু। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আম্বরখানার সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে হঠাৎ করে এক মহিলাকে মারধর করতে দেখেন স্থানীয় লোকজন।
আম্বরখানা সরকারি কলোনীর সংলগ্ন তপু টেইলার্সের মালিক তপু। তার প্রতিষ্ঠানে ৩ মাস যাবৎ নগরীর শেখঘাট এলাকার নাজমা আক্তার নামের এক মহিলা কাজ করতেন। কিন্তু গত কয়েকদিন তিনি দোকানে আসেননি। সকালে দোকানে এলে তপু গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে আম্বরখানা সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে এসে নাজমাকে ধরে রাস্তায় ফেলে মারধর শুরু করেন তপু। খবর পেয়ে আম্বরখানা পয়েন্টে থাকা পুলিশের হাবিলদার নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ এসে উভয়কে নিয়ে যায়।
নাজমা বলেন, ‘আমার বেতনের টাকা নিয়ে সে আমাকে তিন মাস যাবৎ ঘুরিয়েছে। আজ আমি বেতনের টাকা নিতে আসলে সে আমাকে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে আমি বাসায় ফিরে যেতে চাইলে সে আমার পিছু নেয়। সে পিছু নিচ্ছে দেখে দৌড় শুরু করি। এরপর আমাকে রাস্তায় ফেলে আমাকে সে মারধর করে।’
এদিকে গতকাল এ ঘটনার ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন নির্যাতনকারী ব্যবসায়ী তানভীর আহমদ তপু। বুধবার গণমাধ্যমে দেয়া এক প্রতিবাদপত্রে তিনি হেনস্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানান, নাজমা নামের ওই নারী তার টেইলার্সে সাপ্তাহিক মজুরিতে কাজ করতেন। সপ্তাহদিন আগ থেকে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সে কাজে অনুপস্থিত থাকে।
এ সময় তার কাছে কাজ করে দেয়ার জন্য কয়েকজন প্রবাসীর কিছু মূল্যবান কাপড় ছিল। এ কাপড় বাসায় কাজ করে টেইলার্সে দেয়ার কথাও ছিল। অনুপস্থিত থাকাবস্থায় প্রবাসীরা তাদের কাপড় নেয়ার জন্য টেইলার্স কর্তৃপক্ষকে বারবার চাপ দিলে তানভীর আহমদ তপু তাকে বারবার ফোন করেন। কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেনি। তার বর্তমান অবস্থানে খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এমতাবস্থায় হঠাৎ নাজমাকে আম্বরখানা পয়েন্টে অপেক্ষমাণ দেখে তপু তাকে অনুপস্থিতি ও ফোন না ধরার কারণ জিজ্ঞেস করতে চাইলেই নাজমা দৌড়ে পালাতে শুরু করে। এ সময় পথচারী লোকজন তাকে ‘চোর চোর’ বলে ধরে ফেলতে চাইলে তপু তাকে ধরে আটকান ও চোর নয়, তার দোকানের কর্মচারী বলে জনরোষ থেকে রক্ষা করেন। ইত্যবসরে পুলিশ এসে ওই নারী ও তপুকে থানায় নিয়ে গেলে নাজমা অজ্ঞাত কারণে তার অনুপস্থিতি ও আত্মগোপনে থাকার কথা অবলীলায় স্বীকার করে। পরে দোকান থেকে নেয়া কাপড়গুলো ফেরত দিয়ে লিখিত মুচলেকার মাধ্যমে কাজের মজুরিসহ লেনদেন শেষ করে ওই মহিলা চলে যায়।
নিন্দা : আম্বরখানা পয়েন্টে সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে জনসম্মুখে কর্মজীবী নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক সিলেট জেলার পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, নারীর প্রতি প্রকাশ্যে নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না। প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রশাসন এবং সুশীল সমাজকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক সিলেট জেলার কার্যকরী সদস্যরা।