নিউজ ডেস্ক : বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বিচার প্রলম্বিত করা, সাক্ষীদের হুমকি, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা এই তিন কৌশলে বিচার বানচাল করতে চেয়েছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। কেবল বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের মধ্য দিয়েই বিচার নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টি গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২শ' কোটি টাকা খরচ করেছিলেন তিনি।
প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস প্রতিষ্ঠানকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন মীর কাসেম আলী। ওয়াশিংটনভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানের একটি মেমোও পাওয়া গিয়েছিল যেখানে ‘পেশাগত সেবার’ জন্য মীর কাসেমের পাঠানো ডলার হাতে পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি কাসেমের।
বিত্তশালী এই অপরাধীর অর্থ ছড়ানোর প্রমাণ পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার রায় হওয়ার পর সেই শঙ্কার জায়গাটা দূর হলো।
২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে দুটি অভিযোগে ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৮ মার্চ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে হত্যা ও ছয় অভিযোগে মোট ৬২ বছরের কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ৬ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছেন, মীর কাসেম আলী একজন প্রতাপশালী ব্যক্তি। তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বানচাল করতে লবিস্ট নিয়োগে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সক্ষম। আসামি খুবই অর্থশালী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির দাখিল করা জামিন আবেদনে এর প্রমাণ মেলে।
ব্যারিস্টার তুরিফ আফরোজ বলেন, ‘কাসেম আলী বিপুল সম্পদের মালিক। বিচারের শুরু থেকে দেশে বিদেশে কোটি কোটি ডলার নিয়োগ করেছেন বিচার বন্ধ করার জন্য। এই মামলাটি নিয়ে আমাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে। তারা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছেন বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য, ফাঁসি ঠেকানোর জন্য।
প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম বলেন, ‘এই মামলার সাক্ষীদের আনার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এসে সাক্ষ্য দেবে জানান সাথে সাথে প্রথমে টাকা দিয়ে হাত করতে চেয়েছেন, তারপর তাতে রাজি না হলে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিচার হবে বোঝার পর থেকে তারা নানাবিধ কৌশলের মধ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখার কাজটিতে গুরুত্ব দেয় বেশি। সরকার না থাকলে বিচার থাকবে না, এই জায়গা থেকে তারা চেয়েছে দেশ ও রাজনীতি অস্থিতিশীল হোক। তিনি আরও বলেন, আজকের এই বিত্তশীল কুখ্যাত আলবদর একাত্তর-পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালায় যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধে মসজিদ, মাদ্রাসা ভেঙে ফেলেছে মুক্তিযোদ্ধারা। সে সময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক অর্থ সহযোগিতা পায়। সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে আজকের মীর কাসেম আলী।’
রিভিউয়ের আবেদন খারিজ হওয়ার পর উদ্বিগ্নতা প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘অর্থ বিত্ত ঢেলে বিচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।আমি একজন আইনজীবী হিসেবে উদ্বিগ্ন থাকারই কথা। কিন্তু তার বিচার বানচালের যত রকমের চেষ্টা আমরা দেখেছি, তাতে করে উদ্বেগ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। তবে মীর কাসেম আলীর বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। -বাংলা ট্রিবিউন
৩০ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম