বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ০২:৩২:৫০

ক্ষমা না চাইলে যে কোনো সময় মীর কাসেমের ফাঁসি

ক্ষমা না চাইলে যে কোনো সময় মীর কাসেমের ফাঁসি

ঢাকা : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী ক্ষমা না চাইলে যে কোনো সময় তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। তাকে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই তার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল সকাল ৯টায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। একবাক্যে রায় ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রিভিউ পিটিশন ইজ ডিসমিসড’। রায়ে বলা হয়, ‘উই ফাউন্ড হিম গিলটি, কনভিকশন ইজ মেইনটেনেবল’।

আপিল বিভাগ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, আটক রেখে নির্যাতন এবং হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে। তবে রিভিউর রায়ে অন্য দণ্ডের বিষয়ে কিছু সংশোধনী রয়েছে।

এদিকে পিটিশন খারিজের আট ঘণ্টার মধ্যে বিকাল ৫টায় রিভিউর রায় প্রকাশ করে অনন্য নজির স্থাপন করেছে আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ছিলো; কিন্তু এই রায়ের মধ্য দিয়ে সকল উদ্বেগের অবসান হয়েছে এবং সমগ্র জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো।

অন্যদিকে মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সাজানো যে সাক্ষ্যপ্রমাণ তৈরি করা হয়েছে তার ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হয়েছে। আদালতের গত্যন্তর নেই। আইনটি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে শোনা কথার উপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যায়। তিনি বলেন, ভবিষ্যত্ প্রজন্ম এবং সারা বিশ্বের আইন অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিবেচনা করবেন- এই রায় সঠিক হয়েছে কিনা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আলবদর কমান্ডার ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে। রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরদিন মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে আটক করে আলবদর সদস্যরা।

১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদররা তাকে দিনভর নির্যাতন করে। নির্মম অত্যাচারে জসিম মারা যান। পরে নিহত আরো পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের মরদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করেন মীর কাসেম। গত ২৮ আগস্ট ওই রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়।

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি প্রবেশ ফটকে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। সকাল ৯টা ১ মিনিটে এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ বেঞ্চের চার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। এজলাস কক্ষে আগে থেইে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় ছিল পিনপতন নীরবতা। সকাল ৯টা ৩ মিনিটে বেঞ্চ কর্মকর্তা এক নম্বর আইটেম রায় ঘোষণার জন্য উল্লেখ করেন। এরপরেই প্রধান বিচারপতি রিভিউ পিটিশন খারিজ বলে রায় ঘোষণা করেন। ওই খারিজ আদেশের মধ্য দিয়ে মীর কাসেমকে একাত্তরে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত করল আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার পর বিকাল ৫টায় তা প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতির স্বাক্ষরের পরেই সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে রায়টি প্রকাশ করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ১২ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে রায়ের কপি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। - ইত্তেফাক

৩১ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে