নিউজ ডেস্ক : মীর কাসেম আলীর একটাই দাবি মৃত্যুর পর তার নামাজে জানাজা যেন ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) পড়ায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়শা খাতুন।
এদিকে গত ৯ আগস্ট থেকে ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) নিখোঁজ রয়েছেন।
মীর কাসেম আলীর পরিবারের অভিযোগ, তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে গিয়ে গেছে। এরপর থেকে কেউ সন্ধান দিচ্ছেন না। কেউ স্বীকারও করছেন না।
মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়শা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, মীর কাসেমের ইচ্ছে, মৃত্যুর পর তার নামাজে জানাজা যেন পড়ায় ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম। এটা তার অছিয়ত।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী নেতা মীর কাসেম আলী প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।
আজ শুক্রবার লিখিতভাবে এ কথা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষকে। এর ফলে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা রইল না।
এ কথা জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।
শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।
জানা গেছে, এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করে প্রাথমিক মহড়া দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জল্লাদ দলকেও।
এ ব্যাপারে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের আদেশ পেলে রায় কার্যকর করা হবে। এজন্য আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি আছে।
গত মঙ্গলবার রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজ সংক্রান্ত রায়ের কপি গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ পৌঁছানো হয়।
রাত অনেক বেশি হওয়ায় তখন মীর কাসেম আলীকে রায় পড়ে শোনানো হয়নি। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রায় পড়ে শোনানো হয়।
৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী ২০১২ সালে গ্রেফতারের পর থেকে এ কারাগারেই রয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির কনডেম সেলে স্থানান্তর করা হয়।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে ২টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ৮টি অভিযোগে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেন।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ৮ মার্চ আপিল বিভাগ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
এছাড়া আরো ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাভোগের সাজা বহাল রাখেন। গত ৬ জুন আপিল বিভাগ মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল রেখে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
মীর কাসেম ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি উত্থাপন করে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চান তিনি। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়।
২৮ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শেষ করে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ৩০ আগস্ট মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজের রায় দেন।
মীর কাসেম আলী জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম অর্থ যোগানদাতা বলে চাউর রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি।
২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম