রেজাউল করিম : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১২টি আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) একটি আবেদনও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ১২টির মধ্যে ১১ জন দণ্ড কমানোর আপিল করেছেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ এক আসামির দণ্ড বৃদ্ধির জন্য আপিল করেছে, পাশাপাশি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।
দণ্ড কমাতে আপিল করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির পাবনার আবদুস সুবহান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা রংপুরের এ টি এম আজহারুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সার (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), চাঁপাইনবাবগঞ্জের আফসার হোসেন চুটু (আমৃত্যু কারাদণ্ড) ও মাহিদুর রহমান (আমৃত্যু কারাদণ্ড), পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), বাগেরহাটের সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ও খান আকরাম হোসেন (আমৃত্যু কারাদণ্ড), নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ও ওবায়দুল হক তাহের (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), কিশোরগঞ্জের শামসুদ্দিন আহমেদ (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান বড় মিয়া (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) ও আব্দুর রাজ্জাক (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামালপুরের আইনজীবী শামসুল হক (আমৃত্যু কারাদণ্ড) ও এস এম ইউসুফ আলী (আমৃত্যু কারাদণ্ড)।
সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল : পিরোজপুরের সাবেক এমপি পলাতক জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছে জব্বারের। রাষ্ট্রপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ২৬ মামলায় ৫০ জনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ বছর পাঁচ মামলার বিচার সম্পন্ন করে রায় দিয়েছেন। এ পাঁচ মামলায় মোট অভিযুক্ত ছিলেন ২৬ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জনই পলাতক। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট যশোরের সাবেক এমপি সাখাওয়াত হোসেনসহ আটজনের মামলার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে যেসব আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে, ধীরে ধীরে সব কটিই নিষ্পত্তি করবেন আপিল বিভাগ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে আপিল বিভাগে অন্যান্য মামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগছে বেশি। অনেক দেশে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিশেষ মামলার আপিল নিষ্পত্তি করতে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। এসব মামলার আপিলের ক্ষেত্রেও আপিল বিভাগে একটি বিশেষ বেঞ্চ করলে দ্রুত আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে রায় কার্যকর সম্ভব।’
ট্রাইব্যুনালে চলমান বিচার : বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার মামলায় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৪ আসামির বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে গাইবান্ধার ঘোড়ামারা আজিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার চার রাজাকারের বিরুদ্ধেও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। শরীয়তপুরের দুই রাজাকার সোলায়মান ও ইদ্রিসের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। কিশোরগঞ্জের সৈয়দ হুসাইন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া আরো ১৬টি মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। - কালের কণ্ঠ
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি