রবিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:৫২:৫৬

নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় মীর কাসেমের

নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় মীর কাসেমের

ফারজানা লাবনী : জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজা ভোগকারী মীর কাসেম আলীর রয়েছে সম্পদের পাহাড়। জামায়াতের মূল অর্থ জোগানদাতা মীর কাসেম আলী ঢাকা কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল-৫০-এর করদাতা। তার করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন ০৭৬-১০৩-৯৬৬৩।

আয়কর রিটার্নে মীর কাসেম আলী তার সম্পদের বেশির ভাগই নিজের নামে না দেখিয়ে তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন কম্পানি, ট্রাস্ট ও বেসরকারি সংস্থার নামে দেখিয়েছেন। আবার পরিবারের সদস্যদের নামেও দেখিয়েছেন সম্পদ। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। এনবিআর সূত্র মতে, মীর কাসেম আলীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

মীর কাসেম আলীর আয়কর রিটার্ন এবং এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মীর কাসেম আলীর তত্ত্বাবধানে থাকা প্রতিষ্ঠান কেয়ারী লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, ইবনে সিনা ট্রাস্টের নামে ৫০ কোটি টাকা, ইবনে সিনা হাসপাতালের নামে ছয় কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে ২০ কোটি টাকা, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের নামে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের নামে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং ফুয়াদ আল খতিবের নামে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। কাসেম আলীর নিজ নামে ধানমণ্ডির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মল কেয়ারী প্লাজায় অবিক্রীত ১৭৮ দশমিক ৬৯ বর্গমিটার ফ্লোর রয়েছে বলে এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। বাকি অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন বলে রিটার্নে উল্লেখ আছে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে মীর কাসেম আলীর নিজের নামে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ হাজার ২৭৭টি শেয়ার থাকার কথা বলা হয়েছে।  ইসলামী ব্যাংকের দুই হাজার ১১৩টি শেয়ার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের এক হাজার শেয়ার, কেয়ারী ঝরনা লিমিটেডের ২০টি, কেয়ারী তাজ লিমিটেডের পাঁচটি, কেয়ারী সান লিমিটেডের পাঁচটি, কেয়ারী স্প্রিং লিমিটেডের ২০টি, সেভেন স্কাই লিমিটেডের ১০০টি, মীর আলী লিমিটেডের ২৫টি এবং দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০টি শেয়ারের কথা মীর কাসেমের নামে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্ত্রীর নামে ১০০টি এবং দুই ছেলে ও তিন মেয়ের নামে আছে  ৫০০টি শেয়ার।

মীর কাসেম আলী কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে ইবনে সিনা ট্রাস্ট, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য ছিলেন। ইবনে সিনা হাসপাতাল ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্র্রি লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে অংশীদার ছিলেন। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসমেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিকস রিসার্চ সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন তিনি। মীর কাসেম ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সিসের বিভিন্ন বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নেওয়ায় নিয়মিত ভাতা পেতেন।

আয়কর রিটার্নে মীর কাসেম পৈতৃক সূত্রে রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে ২৮৭ নম্বর প্লটের বহুতল ভবনের মালিক ছিলেন। তার ব্যক্তি নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির পাঁচ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সাড়ে ১২ শতক জমি রয়েছে বলেও বলা হয়েছে। তবে ২০১০ করবর্ষের আয়কর রিটার্নে এসব বাড়ি ও জমির নামমাত্র মূল্য দেখানো হয়। রিটার্নে বার্ষিক আয় ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৫২৯ টাকা এবং ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭০১ টাকা দেখানো হয়েছিল সে সময়। ২০১০ সালের আয়কর রিটার্নে ব্যক্তিগত ঘোষিত মোট পরিসম্পৎ তিন কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩২৪ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল। - কালের কণ্ঠ

৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে