কলকাতা : এক সপ্তাহ পূর্ণ হল ‘অপারেশন হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’-এর সাফল্যের। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে দুই সঙ্গীসহ তামিম চৌধুরী নিহতের পর সাত দিন কেটে গেছে। বাংলাদেশে এনকাউন্টারে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় গোয়েন্দারা স্বস্তিতে আছেন।
তারা আশা করছেন, তামিমের মৃত্যুর পর ভারতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা যেমন কিছুটা কমলো, তেমনি এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যত্র বাংলাভাষীদের মধ্যে থেকে ইসলামিক স্টেট বা আইএস জঙ্গি সংগঠনে ক্যাডার নিয়োগেও ভাটা পড়বে।
শনিবার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্ত্রাসের এখন কোনও ভৌগোলিক সীমারেখা নেই। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে সন্ত্রাসীদের ক্ষতি হলে তা গোটা দুনিয়ার লাভ। সেদিক থেকে তামিম চৌধুরীর নিহতের ঘটনাও গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে, সন্ত্রাসীদের কাছে বড় ধাক্কা। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী দেশে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের কাছে সেটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি’র এক কর্মকর্তার কথায়, ‘মনে হচ্ছে, কিছুটা স্বস্তি মিললো। তামিম মারা যাওয়া মানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনের মাথাই কেটে গেল। কিছু দিন ওরা নেতৃত্বের সঙ্কটে দিশেহারা থাকবে।’
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য তাদের দেশে আইএসের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। তারা তামিম চৌধুরী ও তার অনুগামীদের নব্য জেএমবি বা ওই সংগঠনের নতুন ধারার প্রবর্তক বলে মনে করে। আবার ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করেন, জেএমবি’র একঝাঁক তরুণ, শিক্ষিত ও প্রযুক্তি বিদ্যায় দক্ষ সদস্যই আইএসের বাংলাদেশ শাখা হিসেবে কাজ করছে।
পশ্চিমবঙ্গে আইএস জঙ্গি সন্দেহে গত ৫ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছে বীরভূমের লাভপুরের যুবক মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসাকে। ৪ জুলাই তাকে বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে ধরা হয়েছিল। ওই যুবককে আইএসে নিয়োগ করেছিল এক বাংলাদেশি নাগরিক, যাকে মুসা চিনতো জিহাদি জন ওরফে আবু সুলেমান নামে। সে-ই মুসাকে খুন করার নির্দেশ দেয় এবং মোবাইলে সেসবের ভিডিও রেকর্ডিং করে নিজের ক্ষমতার প্রমাণ দিতে বলে। কিন্তু সেসব করার আগেই মুসা ধরা পড়ে যায়। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, আইএসে মুসার ‘রিক্রুটার’ ওই সুলেমানের ‘বস’ই হলো এই তামিম চৌধুরী। আইএসে যার নাম শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ বলে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দাবি।
এ বছর এপ্রিলে আইএসের অনলাইন মুখপত্র ‘দাবিক’-এর চতুর্দশ সংখ্যায় আবু ইব্রাহিমের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। যেখানে তাকে বাংলায় খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা যোদ্ধাদের ‘আমির’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে তামিম ওরফে ইব্রাহিম বাংলাদেশে খোলাখুলি জিহাদ প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়, কড়া ভাষায় সমালোচনা করে শেখ হাসিনা সরকারের।
তার ভাষায়, বাংলাদেশে জিহাদের ভিত শক্ত হলে ভারতের মধ্যে গেরিলা আক্রমণ এক সঙ্গে করা যাবে পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিক দিয়েই। কারণ, ভারতের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ, পশ্চিমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এই সাঁড়াশি আক্রমণের ফলে হত্যালীলা শুরু করা যাবে ভারতে। যাতে সাহায্য করবে স্থানীয় মুজাহিদরা। তারপর ভারতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢুকবে সাবেক সেনাবাহিনী।
ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা বুঝতে পারেন, বাংলাদেশে আইএসের প্রভাব বৃদ্ধির চূড়ান্ত লক্ষ্য আসলে ভারতে হামলা চালানো এবং সেই উদ্দেশ্যে দেশজ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও আইএস যোগাযোগ রাখছে। দাবিকের চতুর্দশ সংস্করণটি অনলাইনে ‘আপ’ হওয়ার মাস তিনেকের মধ্যেই ঢাকার গুলশান, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা হলো।
জুলাই মাসেই প্রকাশিত হয় দাবিক-এর পঞ্চদশ সংখ্যা। সেখানে গুলশান হামলাসহ বাংলাদেশের ২৭টি হত্যার ঘটনায় আইএস নিজেদের দায় স্বীকার করেছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি’র এক কর্তার বক্তব্য, ‘তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে আইএস শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গেও জাল ছড়িয়েছে। তামিমের মৃত্যু সেই পরিকল্পনাকে একটা ধাক্কা দেবে।’ -বাংলা ট্রিবিউন
০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম