শনিবার, ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:১৭:০৯

মেলেনি ক্লু, গ্রেফতারও হয়নি কেউ

মেলেনি ক্লু, গ্রেফতারও হয়নি কেউ

নিউজ ডেস্ক : ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলাকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত দৃশ্যত কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার ও করা যায়নি। তবে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সিজার হত্যার ঘটনায় দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

ইতিমধ্যে প্রায় ২৬ জনকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ঘটনায় তারা জড়িত কি-না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে। কূটনীতিক পাড়ার নিরাপত্তা বেস্টনীর মধ্যে সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তাভেলা সিজার হত্যার ঘটনায় তার বান্ধবী ডাচ নাগরিক নিগার রিগ্যালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে সিজারের কর্মস্থল আইসিসিও কো-অপারেশনের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা মার্টিনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্ত কমিটি তাদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছে।

তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা সিজারের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। গত মে মাসে ঢাকায় আসার পর তার সঙ্গে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে মার্টিনের সঙ্গে কথোপথন হয়েছে। রিগ্যাল জানিয়েছেন, সিজারের সঙ্গে তার শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ঢাকায় বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। তিনি খুন হবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি রিগ্যাল।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এনজিও সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনে কর্মরত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু ওই সংস্থায় সিজারের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না বলে প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন তারা। একইভাবে সিজারের ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতেন। অফিস, বাসা ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সুইমিংপুল ও বিকালে জগিং করার মাধ্যমেই সময় অতিবাহিত হতো তার।

সবকিছু মিলিয়ে সিজারের জীবন ছিল নিয়মতান্ত্রিক। বাংলাদেশে আসার মাত্র চার মাসের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হলো। এই হত্যাকাণ্ডটি তার ব্যক্তিগত কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটেনি বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। গতকাল পর্যন্ত গুলশান এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিরীক্ষা করেছেন গোয়েন্দারা। এতে কিলারদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সন্দেহভাজন ২৬ জনের তালিকা করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তাদের মোবাইল ফোন ট্রাকিংসহ প্রযুক্তির সাহায্যে নানাভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। ওই তালিকায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামও রয়েছে।

সিজার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি তিনজনের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। হত্যার পর মোটরসাইকেলযোগে ৮৯ নম্বর সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায় কিলাররা। তবে এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাননি তারা। হত্যার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের যে বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে এমন কোন ওয়েব সাইটের ভিত্তি পাননি গোয়েন্দারা।

সিসি টিভির ফুটেজ ও তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা আশাবাদী শিগগিরই এই হত্যার ক্লু বের হবে। সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে রাখতে কোন গোষ্ঠী সিজারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইভাবে হত্যাকাণ্ডে উগ্র মৌলবাদী বা জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকা, সিজারের ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ৯০ নম্বর সড়কে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এনজিও আইসিসিও কোঅপারেশন বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাভেলা সিজার (৫০)। তিনি আইসিসিও কো-অপারেশনের ‘প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি’ কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। এনজিওটি বাংলাদেশে পানি, স্যানিটেশন, রিফিউজি সমস্যা ও পুনর্বাসনসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। -মানবজমিন

৩ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে