জামাল উদ্দিন : আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিতে নারী জঙ্গিরাও মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাবের হাতে আটক নারী জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য জানা যায়। সর্বশেষ রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের বড়ইতলী গ্রাম থেকে জেএমবি’র আত্মঘাতী শাখার চার নারী সদস্যকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ।
আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিতে মাস্টারমাইন্ডদের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে তারা। এর আগে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতেও বেশ ক’জন নারী জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারাও অ্যাটাকে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের।
পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব গত ১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুর ও ঢাকা থেকে চার নারীকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রী ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক রয়েছে একজন। গত ২৪ জুলাই সিরাজগঞ্জ শহর এলাকা থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও চার নারীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
এছাড়া বিভিন্ন সময় জেএমবি’র আরও কয়েকজন নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দিনদিন দেশে নারী জঙ্গির সংখ্যা বাড়লেও এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তবে এর পরিমাণ খুব কম বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চার নারীকে গ্রেফতারের পর র্যাব-৪-এর অধিনায়ক খন্দকার লুৎফুল কবির জানান, ‘গ্রেফতার হওয়া আকলিমা রহমান মানারাত ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি আরবি পড়তে বিভিন্ন জায়গায় জড়ো হতো। সেখানেই তারা দাওয়াতের কাজ চালাতো।’
এমন আরও কয়েকজন নারীর সন্ধান তারা পেয়েছেন। তাদের খুঁজে বের করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নারী জঙ্গি বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে আরও দু’একজনকে ধরা হয়েছে। তবে সেই সংখ্যা খুবই কম।’
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রবিবার রাতে যে চারজন নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা জেএমবি’র আত্মঘাতী দলের সদস্য। তারা হচ্ছেন, জেএমবি’র সংগঠকদের একজন ফরিদুল ইসলামের মা ফুলেরা খাতুন (৪৫), দুই বোন শাকিলা খাতুন (১৮) ও সালমা খাতুন (১৬) এবং প্রতিবেশী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (৩৫)।
গ্রেফতারের পর এসব নারী জঙ্গি পুলিশকে বলে, আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। ‘ফিদায়ী হিজরত’ বা ‘আত্মঘাতী’ হামলার মাধ্যমে তাদের ভাষায় কাফির, মুশরিক, মুরতাদ বা ইসলামের শত্রুদের হত্যার জন্য শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিল তারা। তাদের হেফাজত থেকে জব্দ করা কম্পিউটারের তথ্য থেকে জানা যায়, তারা চাইনিজ ও জাপানি কুংফু-কারাতের ছবি দেখে নিজেরা শারীরিক কসরত করত।’ এর আগে সিরাজগঞ্জ এলাকা থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩১ জন নারীকে গ্রেফতার করা হলেও কেউ আত্মঘাতী দলের সদস্য ছিল না বলে জানান পুলিশ সুপার।
জঙ্গি দমনে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘জঙ্গিবাদে নারীদের অংশ গ্রহণ অতটা ব্যাপক নয়। নারীদের সাধারণত রান্নাবান্নার ও বাসা ভাড়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যেসব নারী সাহসী তারা মনে করে যে, শুধু বাসা ভাড়া কিংবা রান্নাবান্না নয়, তারা কাজে যেতেও আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে।’
নারীরা সরাসরি অ্যাটাকে যেতে চায় কিনা—এই বিষয়ে জানতে চাইলে এডিসি ছানোয়ার বলেন, এ সংখ্যাটা খুবই কম। এমন কোনও ইতিহাস আমাদের দেশে নেই। ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন কোনও তথ্যও আমাদের কাছে নেই। তবে ক্ষুদ্র পরিসরে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জঙ্গি নারীরাও এখন চাচ্ছে হামলায় অংশ নিতে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীদের অংশ নেওয়ার বিষয়টি মিডিয়ায় দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষণ, মানসিক গঠন বা সেই সক্ষমতা তাদের নেই।’ - বাংলা ট্রিবিউন
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি