শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩৫:৪৯

আগামী নির্বাচনের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছে আ’লীগ

আগামী নির্বাচনের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছে আ’লীগ

নিউজ ডেস্ক : পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০১৯ সালে হবে ধরে নিয়ে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমানে চলছে মাঠ জরিপ। খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্যদের বিষয়ে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ।

আওয়ামী লীগের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথাও বলেছেন। এছাড়া তিনি তার প্রকাশ্য বক্তব্যে এমপিদের এলাকামুখী হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য থাকে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। আর তার মাধ্যম হল নির্বাচন।

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে জনগণের কল্যাণে কাজ করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। আমরা আগেও তা করেছি, ভবিষ্যতেও তা-ই করে যাব। আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। দলের সম্মেলন, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো- এগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতিরই অংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর মধ্যেই সরকারি-বেসরকারিভাবে নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের ওপর জরিপের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রতিটি আসনে জনপ্রিয়তা যাচাই করে একাধিক প্রার্থীর নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমান সংসদের এমপিদের মধ্যে কারা এলাকামুখী, কারা জনবিচ্ছিন্ন সে বিষয়গুলোও উঠে আসছে জরিপে। এমপিদের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে এখন থেকেই খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে কোন কোন আসনে পরবর্তী নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত, আর কোন আসনে হারার শংকা রয়েছে।

যেসব আসনে হারার শংকা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সেখানে অন্য যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের সম্পর্কে খবর নেয়া হচ্ছে। এসব প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করবে দলীয় হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিজস্ব দলীয় টিম নির্বাচনী এলাকাগুলোয় যে জরিপ পরিচালনা করে, তা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দলের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরা হবে। শুধু নিজ দলের প্রার্থীদেরই নয়, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীদের খবরও নেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের ও সরকারের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী থাকতে থাকতেই আগামী নির্বাচন সেরে ফেলতে চায় হাইকমান্ড। আগাম নির্বাচনের বিষয়টি উড়িয়ে দিলেও যে কোনো সময়ে নির্বাচন হলে যাতে অংশ নেয়া যায়, সেজন্য দলীয় প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, হঠাৎ করে চেপে বসা উগ্রপন্থীদের হামলা-নাশকতা রোধে সরকারের মিশন অনেকাংশেই সফল।

জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে এসেছে। জঙ্গিবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। তাদের ভাষায়, গুলশান ও শোলাকিয়াসহ জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে দেশ।

সেই সঙ্গে বিএনপির ঐক্যের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশবাসীর মধ্যে এক ধরনের মানসিক ঐক্য তৈরি হয়েছে। এছাড়া সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাস্তবায়নসহ অনেক ইস্যুতে সরকার জনগণের মন কাড়তে পেরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দলীয় সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দলীয় কর্মকাণ্ড ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ যথেষ্ট নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছে। অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জনসম্পৃক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলোকে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। এরই মধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পথে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। উদ্বোধন হয়েছে পায়রা বন্দর। রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়নও সরকারকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা মাঝে-মধ্যেই তাদের বক্তব্যে ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে এবং সে লক্ষ্যে অন্য দলগুলোকেও প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জে ১৪ দলের সমাবেশে জোটের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি জঙ্গিবাদের পক্ষ নিয়ে ভুল করেছেন। বিভ্রান্ত তরুণ-যুবকের পক্ষে কথা না বলে, দল গোছান। নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হন। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো চক্রান্ত করে লাভ হবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব শ্রেণীর মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। সে নির্বাচনেও আপনাদের আবার পরাজিত করব।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ২০১৯ সালেই হবে। আমরা এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই বিএনপিসহ অন্য দলকেও প্রস্তুতি নেয়ার বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছি। তবে তার দল কী কী প্রস্তুতি নিচ্ছে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি। যুগান্তর
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে