শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:৩৫:০৮

৯ সপ্তাহে ৫২ জঙ্গি গ্রেপ্তার, অভিযানে নিহত ১৩

৯ সপ্তাহে ৫২ জঙ্গি গ্রেপ্তার, অভিযানে নিহত ১৩

নজরুল ইসলাম : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। গুলশানে হামলার পর গত নয় সপ্তাহে (৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রাজধানীতে পুলিশ ও র‌্যাব ৫২ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ৪০ জন নব্য জেএমবির ও দুজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। অন্যরা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

এই সময়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তিনটি অভিযানে নিহত হয়েছে নব্য জেএমবির ১৩ জন গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি। এদের মধ্যে তামিম চৌধুরী ও মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের মতো দুজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন, তামিম, জাহিদ এবং তার আগে ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নয়জন জঙ্গি নিহত এবং ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘কমান্ডার’ শরিফুল ওরফে মুকুল বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর জঙ্গিরা চাপে পড়ে গেছে।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বলেন, গুলশানে হামলার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ শুরু করা হয়। ফলে অনেক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে অনেক জঙ্গি ধরা পড়ছে, অনেকে অভিযানে নিহত হয়েছে। পুলিশের অভিযানের মুখে জঙ্গিরা সংগঠিত হতে পারছে না।

অবশ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। এ ধরনের গোষ্ঠী যাতে আবার সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

র‌্যাব ও ডিএমপির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুলশানে হামলার আগে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে, যাদের দুজন জেএমবির ও একজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।

গুলশানে হামলার পর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তিনটি অভিযানে ১৩ জন, গত আগস্টে বগুড়া, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে ছয়জন জঙ্গি পুলিশ ও র্যা বের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ছাড়া হলি আর্টিজানে উদ্ধার অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি এবং শোলাকিয়ায় হামলায় নিহত একজনসহ হিসাবে ধরলে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৮ জন জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে রাজধানীর দারুস সালামে পুলিশ সদস্য ইব্রাহীম মোল্লাকে হত্যা, পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলা ও বাড্ডায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান খিজির খানকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় জেএমবির ১৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তখন ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হোসেনি দালানে হামলার পরিকল্পনাকারী আলবানি ওরফে হুজ্জা, কামাল ওরফে হিরনসহ নব্য জেএমবির তিন জঙ্গি নিহত হন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজানের পর র্যা ব ও পুলিশের অভিযানের মুখে চাপে পড়ে অনেক জঙ্গি আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালানোরও চেষ্টা করছে। গত বুধবার পালানোর সময় দুই জঙ্গি দম্পতি র্যা বের হাতে ধরা পড়েছে।

জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়েছে, জঙ্গিরা ধরা পড়ছে, হয়তো কিছুটা চাপেও আছে। এ সবই সত্যি। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে জঙ্গিরা একটা লম্বা সময়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৬-২০০৭ সালে যে জেএমবিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হলো। এরপর বিগত বছরগুলোতে প্রচুরসংখ্যক জঙ্গি ধরা পড়ল। তারপরও আবার নব্য জেএমবির ভয়ংকর রূপ দেখতে হলো।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জঙ্গিদের তৎপরতা পর্যালোচনা করলে এটা বোঝা যায় যে গুলশানে হামলার পর যে একটা ধাক্কা আসবে, এটা জঙ্গিদের হিসাবের মধ্যেই ছিল। কেউ মারা গেলে তার জায়গা কে নেবে, এগুলোও অনেকখানি ঠিক করা থাকে। তারা সব সময় একই মাত্রায় তৎপরতা চালায় না। তাদের হামলা কখনো সফল হবে, আবার বিফল হবে—এসব তাদের অনুমিত। তাই লম্বা সময়ের জন্য জঙ্গিবিরোধী লড়াই চালানোর ধৈর্য, কৌশল, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি থাকতে হবে। প্রথম আলো

১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে