শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:৩১:৫০

দুর্ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি: গীতা রানী

দুর্ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি: গীতা রানী

জাতীয় ডেস্ক: দগ্ধ শরীরের প্রায় পুরোটাই সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো। ঘুমাচ্ছিলেন। বিষণ্ন মুখে ঘুমন্ত স্বামীর দিকে তাকিয়ে ছিলেন গীতা রানী দাস (৩০)। স্বামীর দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণার ছাপ গীতা রানীর মুখে ছিল স্পষ্ট। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাঁর হতাশ দৃষ্টি স্পর্শ করছিল পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। থেমে থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন তাঁরা। গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত দিলীপ দাসের (৩৫) স্ত্রী গীতা রানী জানালেন, ধার করে আনা মাত্র তিন হাজার টাকা সম্বল করে স্বামীর চিকিৎসা শুরু করেছেন তিনি। এখন সেই টাকাও শেষের দিকে।

বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ১৫ জন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে গুরুতর আহত তিনজনকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাখা হয়েছে। দিলীপ দাস সেই তিনজনের একজন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে।
আজ শনিবার বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়াতেই কানে আসে নানা কণ্ঠের আর্তচিৎকার। দগ্ধ ব্যক্তিরা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন।
আজ সকাল ছয়টার দিকে ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১৮ জন টঙ্গীতে ও চারজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। কারখানাটিতে ফয়েল পেপার ও কেমিক্যাল-জাতীয় দ্রব্য প্রস্তুত করা হতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানাতে কাজ করার সময় দগ্ধ হন দিলীপ দাস। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী​ জেলায়।
স্ত্রী গীতা জানান, ট্যাম্পাকো কারখানায় হেলপার হিসেবে কাজ করতেন তাঁর স্বামী। তিনি বলেন, ‘সে বয়লারের সামনেই ছিল। রাইতে ডিউটি ছিল না। গেছিল সকাল ছয়টায়। ওই সময়েই দুর্ঘটনা ঘটছে। যখন সবাই ধরাধরি কইরা আনছে, তখন তাঁর শইলে কাপড়ও ছিল না। সব পুইড়া গ্যাছে।’

দিলীপ ও গীতার সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। ছেলে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। আর মেয়েটির বয়স পাঁচ বছর। গীতা সন্তানদের মা-বাবার কাছে রেখে হাসপাতালে এসেছেন। মেয়েটা সকাল থেকেই বাবার কাছে আসার বায়না ধরেছে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা হয়নি। এখন সে বাবার কথা বলে শুধু কাঁদছে। গীতা বলেন, মেয়েটার কাছে বাবাই সব। শরীর খারাপ শুনে বাবাকে দেখতে চাইছে বারবার।

গীতা রানী জানালেন, দুর্ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি।

চিকিৎসার টাকা জোগাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন গীতা। তাঁর হাতে ছিল মাত্র এক হাজার টাকা। পরিচিত একজনের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার করে স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। চিকিৎসায় সেই টাকার প্রায় পুরোটাই শেষ হওয়ার পথে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চালাবেন, তা নিয়েই এখন চিন্তায় আছেন। গীতা বলেন, ‘বেতন-বোনাস সব তো শেষ। বাড়িভাড়া আর ঋণ শোধ করতেই সব শেষ হইয়্যা গ্যাছে। চিকিৎসা করার টাকা নাই। ওভারটাইমের টাকা ঈদের পরে দেওয়ার কথা। এখন তো কারখানাই পুইড়া গ্যাছে। ওই টাকা পাইলে কাজে দিবে।’

দিলীপের শ্যালক অধীর কুমার দাস বলেন, তাঁর দুলাভাই খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। টানাটানির সংসার। এরপরও ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করানোর ব্যাপারে দিলীপের খুব আগ্রহ ছিল।

এ নিয়ে আক্ষেপ করছিলেন গীতাও। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ সামলাবেন কীভাবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘আমি চাকরি করলে এত চিন্তা করতাম না। আমি তো কিছু করি না। আমার কিছু হইলে সমস্যা নাই। কিন্তু সে তো রোজগার করে। তাঁর কিছু হইলে ক্যামনে চলব?’-প্রথম আলো
১০ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে