শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:২২:৪৮

দুই মেয়রের তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে রাজধানীবাসীর

দুই মেয়রের তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে রাজধানীবাসীর

ঢাকা : এবার রাজধানীতে কোরবানি সৃষ্ট বর্জ্য অপসারণে সফলতার ছাপ রেখেছেন ঢাকার দুই মেয়র। অভিনব কৌশলে পূর্বপ্রস্তুতি এবং ঈদের ছুটিতে সংশ্লিষ্টরা মাঠে থেকে নিরলস পরিশ্রম করায় এ সাফল্য এসেছে।

প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও ঢাকার দুই মেয়র, দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর। মহানগরীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে দুই সিটি কর্পোরেশনের এমন তৎপরতা প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীতে এবার ৪ লাখ ৩৭ হাজার পশু কোরবানি করা হয়েছে। এতে আবর্জনা হয়েছে ৩৭ হাজার ৬শ’ টন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৯ হাজার ৮শ’ টন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৭ হাজার ৮শ’ টন। দুই সিটি কর্পোরেশনই বেঁধে দেয়া ৪৮ ঘণ্টা সময়ের পূর্বেই আবর্জনা অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকার দুই মেয়র পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবর্জনা অপসারণে নগরবাসীর সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বর্জ্য অপসারণে সাফল্য প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, সুষ্ঠুভাবে এবারের কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে দুটি বিষয় টার্গেট করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।

প্রথমত আমরা নগরবাসীর সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট বিতরণ, র‌্যালি কর্মসূচি পালন, পলিথিন ব্যাগ বিতরণ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এর বাইরে মসজিদের ইমাম সাহেবরা পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করেছেন এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং টেলিভিশনে সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়াসার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এ সংস্থাগুলো পানির গাড়ি দিয়ে সিটি কর্পোরেশনকে কোরবানির আবর্জনা অপসারণে সহযোগিতা করেছে।
মেয়র সাঈদ খোকন জানান, কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে ৩৫০টি গাড়ি বিরতিহীন ময়লা বহন করে মাতুয়াইল ল্যান্ড ফিলে নিয়ে গেছে। আর এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতায় ছিলেন কাউন্সিলররা, সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আরও বলেন, নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানির ৫০৪টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে আশানুরূপ সাফল্য আসেনি। এভাবে আরও ৪-৫ বছর তৎপরতা চালানো গেলে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বর্জ্য অপসারণে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক জানান, গত কোরবানির ঈদের চেয়ে এবার আমরা কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে বেশি সফল। পশুর হাট, মহানগরীর অলিগলি কোথাও ময়লা-আবর্জনা নেই। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি নগরবাসীর ঐকান্তিক সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এবার ঢাকা উত্তরে কোরবানির জন্য ৬৪৮টি স্থান নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে ১৯৬টি স্থানে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইমাম, কসাই এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হয়। এক্ষেত্রে গতবারের চেয়ে সাফল্য কিছুটা বেশি। তবে আশানুরূপ নয় বলে অভিমত মেয়রের। নগরবাসী নিজ থেকে এসব স্থানে না আসলে তো জোর করে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

ঢাকা উত্তরের মেয়র জানান, সুষ্ঠুভাবে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর এলাকায় কোরবানি দাতাদের মাঝে ১ লাখ পলিব্যাগ সরবরাহ করা হয়। এ এলাকার আবর্জনা অপসারণে দুই হাজার ২২৫ জন নিয়মিত কর্মীর সঙ্গে আরও এক হাজার পাঁচজন অতিরিক্ত কর্মী কাজ করেছেন। এছাড়া বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৫ লাখ ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ২৮টি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে এবং ৬টি গাড়ির মাধ্যমে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। ময়লা অপসারণে এবার ২৫১টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, পল্টন, লালবাগ, গুলশান, বনানী, কুড়িল প্রগতি সরণি এলাকার কোথাও কোরবানি বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। রক্ত বা অন্য উচ্ছিষ্টের কোনো গন্ধ পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ আবু নাছের খান বলেন, ঢাকার দুই মেয়রের নিরলস পরিশ্রমের কারণে কোরবানি পশুর দৃশ্যমান আবর্জনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি দুই মেয়রের নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকা ভবিষ্যতে আরও পরিবেশবান্ধব এবং বাসযোগ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, এখনও ঢাকা শহরে দক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে উঠেনি। কোরবানির পশুর বর্জ্য এখনও ড্রেন-খোলা নিচু জায়গায় ফেলা হচ্ছে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধ নিরসনে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর বিভিন্ন মেডিসিন। এতে করে ঢাকা শহরের আশপাশের নদী-নালা, খাল-ডোবার পানি এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষিত হচ্ছে।

এ পরিবেশ বিশেষজ্ঞের মতে, ঢাকা শহরে দক্ষ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে মক্কার আদলে নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এটা শুরু করলেও নগরবাসী তাতে সাড়া দিচ্ছেন না।

পরিবেশ ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক বলেন, এবার কোরবানি ঈদের দিন এবং পরের দিন বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোরবানি পশুর রক্ত ও বর্জ্য জলাবদ্ধতায় মিলে নোংরা রূপ ধারণ করে। যেটা গণমাধ্যমে বিশ্ববাসী দেখেছে। তাই ঢাকার দুই মেয়রকে আবর্জনা অপসারণের চেয়ে পানি নিষ্কাশনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার। - যুগান্তর
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে