নিউজ ডেস্ক : পেছনে আইএস'র পতাকা আর সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হোসেন খান নামের দুই যুবক উঁকি দিয়ে গেছেন ফেসবুকে। তারা সম্পর্কে দুই ভাই। ওই দুই যুবকের নাম রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকাশিত নিখোঁজদের তালিকায়।
বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে ইব্রাহিম হাসান খানের ফেসবুক পৃষ্ঠায় ওই ছবি প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তা সরিয়ে অথবা গোপন করে ফেলা হয়। অবশ্য ততোক্ষণে ওই ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছেন অনেকেই।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নিখোঁজ ১০ যুবকের যে প্রথম তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রকাশ করেছিল, সেখানে ওই দুই ভাইয়ের নাম আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, এই দুই ভাই এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় এক বছর ধরে নিরুদ্দেশ।
ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারহান ইসলাম বলেন, ''সকালে ফেসবুকের টাইমলাইনে ইব্রাহিম আর ওর বড় ভাই জুনায়েদের ছবি দেখে চমকে উঠেছিলাম। ইব্রাহিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখলাম ছবিতে আরেকজন আছে। পেছনে আইএসের মতো পতাকা। কখনো ভাবিনি এমন কিছু ঘটেছে।''
ফারহান এক সময় সৌদি আরবে ইব্রাহিমের সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন।
ওই ছবিতে তিন তরুণের গায়েই দেখা যায় কালো পোশাক; প্রত্যেকের হাতে পানীয়র গ্লাস। সামনের টেবিলে ও চেয়ারের পাশে দেখা যায় রাইফেল ও পিস্তলের মত অস্ত্র।
ছবিতে তিনজনের মাঝে সানগ্লাস পরা যে যুবককে দেখা যায়, তিনি ইব্রাহিম এবং তার পাশে লাল পাগড়ি পরিহিত যুবক জুনায়েদ বলে ফারহান জানান।
জানা গেছে, ইব্রাহিম ও জুনায়েদের বাবা মুনির হাসান খান সৌদি আরবে থাকতেন। বছর খানেক আগে একবার তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। তারা বেশিদিন ঢাকায় থাকতেন না।
ইব্রাহিমের ফেইসবুকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ইংলিশ সেকশন, রিয়াদের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর বেশ কিছু ছবি দেখা যায়।
এক সময় ওই স্কুলেই ইব্রাহিমের পরের ক্লাসের ছাত্র ছিলেন ফারহান, যিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন।
তিনি জানান, গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে ইব্রাহিমের সঙ্গে ফেসবুকেই তার যোগাযোগ হয়েছিল। তবে ইব্রাহিম উগ্রপন্থিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন- এমন কোনো আভাস সে সময় তিনি পাননি।
''রিয়াদের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে এ লেভেল শেষ করেছি আমি। ইব্রাহিম ছিল আমার এক বছরের সিনিয়র। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকবার ফেসবুকে কথা হয়েছে, বন্ধুদের মধ্যে যেসব বিষয়ে কথা হয়- সে রকম। ধর্ম নিয়ে কখনো ওর সঙ্গে কথা হয়নি।''
ফারহান জানান, ২০১৩ সালে ইব্রাহিম সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে তিনি শুনেছিলেন। আর ২০১৫ সালে যখন যোগাযোগ হয়, ইব্রাহিম তখন বাংলাদেশে।
ইব্রাহিমের ফেসবুকে ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে তোলা তার বেশ কিছু ছবি রয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির লনে তোলা কয়েকটি ছবিও রয়েছে এর মধ্যে।
গত ১ জুলাই ওই ক্যাফেতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ জন অতিথিকে হত্যা করা হয়। যে তরুণেরা ওই হামলা চালিয়েছিল, তাদের সবাই বেশ কয়েক মাস ধরে নিরুদ্দেশ ছিলেন; এর মধ্যে তিনজন ছিলেন ঢাকার নামি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, ধনী ঘরের সন্তান। -বিডিনিউজ।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম