রবিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:১৭:২৬

মির্জা ফখরুল কি বিএনপি মহাসচিব থাকছেন?

মির্জা ফখরুল কি বিএনপি মহাসচিব থাকছেন?

কাজী সিরাজ : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অনেক দিন পর পুত্র তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও কন্যা এবং প্রয়াত সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করলেন বিলেতে। তার বিলেত সফরের ত্রিবিধ উদ্দেশ্যের মধ্যে চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদযাপন ছিল একটি। আলোচনা হচ্ছে তার সফরের বাকি দুই উদ্দেশ্য নিয়ে। এর একটি হচ্ছে দল পুনর্গঠন নিয়ে পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে সলাপরামর্শ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভারতের বিজেপি সরকারের সঙ্গে একটা ভালো বোঝাপড়ার ক্ষেত্র তৈরি করা। বেগম জিয়ার বিলেত সফরের আগেই আলোচনায় এসেছিল যে, দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে তিনি ছেলের সঙ্গে আলোচনা করতে যাবেন।

বিএনপির অনেক শুভানুধ্যায়ী এর বিরোধিতা করে বলছিলেন, অনেক দিন পর ছেলে, ছেলের বউ, নাতনিদের অবশ্যই দেখতে যেতে পারেন কিন্তু দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে কেন? তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলে? অনেকটা রাজকীয় ফরমান জারির কায়দায় নামকাওয়াস্তের কাউন্সিলে তার এই পদায়ন দলের মঙ্গল করেনি বলেই অনেকে মনে করেন। অনেক সিনিয়র ও ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান থাকার পরও কোনো দলে যদি পারিবারিক উত্তরাধিকারসূত্রে জুনিয়র কাউকে সাকসেসর নিয়োগ করা হয় তা দলের ভিতর ভুল বোঝাবুঝিই শুধু সৃষ্টি করে না, স্থায়ী বিরোধেরও জন্ম দেয়। তারেক রহমানকে নিয়ে বিএনপিতে এই সংকট অস্বীকার করা যাবে না। অথচ তারেক রহমানের সুযোগ ছিল দলের 'ন্যাচারাল লিডার' হওয়ার- যেমন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা।

দলের প্রয়োজনে, সবার ইচ্ছায় ও আমন্ত্রণে নেতৃত্ব গ্রহণ করলে বা নেতৃত্ব আরোপিত হলে যে মর্যাদা পাওয়া যায়, সুপারইম্পোজিশনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দখল করা হলে অথবা নেতৃত্ব পারিবারিক দখলে রাখতে গেলে সেই মর্যাদা, স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। তারেক রহমান রাজনীতির অপরিণত বয়সে একটা 'পাওয়ার' হিসেবে আবির্ভূত হন দল ক্ষমতায় থাকাকালে। আমাদের মতো দেশে যা হওয়ার তাই হয়েছে তার ক্ষেত্রেও। 'মৌ-লোভীরা' তাকে ঘিরে ধরে। রাজনৈতিক অতীত সমৃদ্ধ কেউ কেউ তার সঙ্গে সখ্য গড়ে একটা রাজনৈতিক টিম গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তাদের সামনে সে সুযোগ আসেনি। তারেক রহমানের বন্ধু কারা ছিলেন অথবা বন্ধু হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তা কারও অজানা নেই।

এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে কারা তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাও জানা আছে অনেকের। তারা কেউ তারেক রহমানের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছেন আবার কেউ চরম বিপদে পড়েছেন বলেও বলাবলি আছে। হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনরা দল ও সরকারেরই শুধু বারোটা বাজায়নি, তারেক রহমানেরও সর্বনাশ করেছে। উপযুক্ত ম্যাচিউরিটি অর্জনের আগে অপরিসীম ক্ষমতার মালিক হয়ে গেলে নিজেকে স্থির রাখা কঠিন; তারেক রহমানের জন্যও কঠিন ছিল। এরকম পরিস্থিতিতে ক্ষমতা প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগ হয় বেশি। সে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে। প্রমাণ হবে আদালতে। তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলেন, দলের নেতৃত্বে, সংসদ নির্বাচনে (অষ্টম সংসদে বিশেষ করে), এমনকি সরকারে তারেক রহমানের বাছাই বা পছন্দ নিয়ে দলের সৎ আদর্শবাদীদের মধ্যেই প্রশ্ন আছে।

এমনও বলা হয়, এখনো দলের বিভিন্ন স্তরে যারা তার পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন এবং 'ভাইয়ার লোক' বলে পরিচিত তাদের ভাবমূর্তি ভালো নয়, তাদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশন খুবই খারাপ। গত আট বছর তিনি বিলাত প্রবাসী। দেশের এবং দলের খবর পান ও রাখেন মিডিয়ার বদৌলতে এবং 'ভাইয়ার লোকদের' সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে। কেউ কেউ বিলেত গিয়েও 'ভাইয়ার' সঙ্গে দেখা করেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে দলের সৎ ও আদর্শবাদীরা তো 'বিলাত-বিলাসে' যেতে পারেন না। 'নেতা দর্শনের' শখ থাকলেও তাদের সেই সাধ্য নেই। কারা যান, কেন যান, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

এরাই তার পরামর্শক এবং সোর্স অব ইনফরমেশন। এসব সোর্সে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দল পুনর্গঠনে তারেক রহমানের পরামর্শ দলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে এই শুভানুধ্যায়ী মহল মনে করেন। এদের মতে, দেশের অভ্যন্তরে দলের বাস্তব অবস্থা, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-সংগঠক-কর্মীদের সম্পর্কে বেগম জিয়া যা জানেন, তারেক রহমান তা জানেন না। বিলেতে বসে তা জানা সম্ভবও নয়। দল পুনর্গঠনের সর্বময় দায়িত্ব বেগম জিয়ার ওপরই প্রাথমিকভাবে ন্যস্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি তার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহকর্মীদের (যদি তিনি তা বিবেচনা করেন) নিয়ে একটি যৌথ নেতৃত্ব কাঠামো তৈরি করে তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেই তা যথার্থ হবে।

এটা করতে হলে আগে হাওয়া ভবনের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত 'গুলশান ভবনে' তালা লাগিয়ে দিতে হবে। বেগম জিয়া নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় অফিসেই বসতে পারেন। কাজের সুবিধার জন্য চেয়ারপারসনের কার্যালয় যদি রাখতেই হয়, সেই অফিসে বসবেন বিএনপির একনিষ্ঠ, নিবেদিত ও বিশ্বস্ত নেতা-কর্মীরা; এখন যারা আছেন তাদের অধিকাংশকেই 'ফায়ার' করতে হবে। দল পুনর্গঠনের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দেশে বসে নেওয়াই শ্রেয়; বিলেতে নয়। তারেক রহমান যেহেতু এখনো দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আছেন, চেয়ারপারসন কী করতে চান তা তাকে জানাতে পারেন, এর বেশি কিছু নয়। তারেক রহমানেরও উপলব্ধি করা উচিত, বিএনপি যদি সরকার গঠন করতে না পারে, নিদেনপক্ষে শতাধিক সদস্য নিয়ে সংসদে প্রতাপশালী বিরোধী দলের অবস্থানে যেতে না পারে তাহলে তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত।

দল পুনর্গঠন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ইত্যাদি ব্যাপারে তার হস্তক্ষেপ যদি দলের সম্ভাবনাকে সংশয়াচ্ছন্ন করার ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলে, তারই তো উচিত তা থেকে বিরত থাকা। বেগম জিয়ার এই সফরে অন্য একটা প্রশ্ন উঠছে আমির খসরু মাহমুদকে নিয়ে। তিনি কেন লন্ডন গেলেন এবং বেগম জিয়া আর তারেক রহমানের পাশে পাশে থাকছেন? আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং তাবিথ আউয়ালইবা কেন গেছেন? ব্যাখ্যা একটা হয়তো দাঁড় করানো হবে যে, তাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি, তারা স্বউদ্যোগে গেছেন ইত্যাদি। কিন্তু মানুষ কি এত বোকা?

এর অন্তর্নিহিত কারণ তারা বোঝে না? কেউ কেউ সন্দেহ করছেন যে, তারেক রহমান হয়তো আমির খসরুকে দলের মহাসচিব বানাতে চান। মির্জা ফখরুলের বিকল্প চিন্তা করেই কি তার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাকে যেতে বলা হয়েছে। দলের সবার কাছে এভাবেই হয়তো মেসেজটা পাঠানো হলো বলে ভাবছেন তারা। আমির খসরু বেসিক্যালি একজন ব্যবসায়ী। তার পিতা জনাব নবী চৌধুরীও চট্টগ্রামের বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের পরিবারটাই ব্যবসায়ী পরিবার।

আমির খসরু যে পজিশনে আছেন তা সহনীয় হলেও আমির খসরু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, তাবিথ আউয়ালরা যদি বিএনপির মতো একটা বড় রাজনৈতিক দলে 'ছড়ি ঘোরানোর' পজিশনে চলে আসেন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সংগঠকরা আর এই দল করবে কেন? দলের শুভানুধ্যায়ীরা বলছেন, এরা দলে থাকুন, এমপি, মন্ত্রী হোন আপত্তি নেই কিন্তু নেতা হলে দল আরও ডুববে। তা ছাড়া টাকাওয়ালাদের জন্যই বিএনপির বড় বড় পজিশন নিশ্চিত- এই খারাপ বার্তাটিও জোরালো হবে। বিলেতে বসেও বেগম জিয়া এই বিষয়গুলো ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে পারেন।

বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পরই বিএনপির একটি মহল থেকে বলা হয় যে, লন্ডন থেকে চমক আসবে। তারা বোঝাতে চেয়েছেন যে, দল পুনর্গঠনের যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে দলের নেতা-কর্মী, সংগঠক, শুভানুধ্যায়ীরা যা ভাবছেন, তার বাইরে কিছু হয়ে যাবে। যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে যখন কমিটি বা নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় আসে, বিশেষ করে বার্ষিক বা দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বা কাউন্সিলের আগে এমনকি জরুরি বা আপদকালীন সময়ে কে বা কারা মূল নেতৃত্বে আসবেন বা আসতে পারেন, তেমন একটা ধারণা মাঠকর্মীদের যেমন থাকে, দলের সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাদেরও থাকে।

ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান বিএনপি গণসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে চমকপ্রদ ফল লাভ করতে পারলেও (জনসমাবেশ এবং পাঁচ সিটি নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনের মোটামুটি নিরপেক্ষ প্রথম দুই ধাপে তা লক্ষ্য করা গেছে) আন্দোলনে সম্পূর্ণ ফ্লপ। সাম্প্রতিক চারটি ঘটনা মানুষের সামনে এখনো জ্বলজ্বল করছে।

এক. হেফাজতের ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির, বিশেষ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থানটা এমন আক্রমণাত্দক ছিল, মনে হয়েছে কর্মসূচিটি হেফাজতের নয়, বেগম জিয়া ও বিএনপির। বিএনপি চেয়ারপারসন সেদিন তার দলের লোকজনসহ ঢাকাবাসীকে রাজপথে নেমে হেফাজতের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্দ হয়ে যেতে বলেছিলেন। এমন একটা ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে, ওই দিনই শেখ হাসিনার সরকারকে তারা 'উষ্টা' মেরে ফেলে দেবেন। কিন্তু পারেননি। সাধারণ মানুষ তো পরের কথা, তার দলের লোকরাও নামেননি। যে সব নেতা দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা 'ঘুম' থেকে ওঠার আগেই সরকার বিচক্ষণতার সঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সরকারবিরোধী পরিকল্পনা। যে পদ্ধতিতে পরিস্থিতি সরকার মোকাবিলা করেছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে, নিষ্ঠুরতার কঠোর সমালোচনাও আছে। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। বেগম জিয়া তার লক্ষ্য নির্ধারণে ভুল করেছেন এবং তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন এটাই বড় কথা। নারী নেতৃত্ব ও নারী প্রগতিবিরোধী হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তিনি কী করে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন তা ভেবে তার দলের অনেক শুভানুধ্যায়ীও বিস্মিত হন।

দুই. 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 'বালির বাঁধেই' সরকার তা আটকে দিয়েছে। সেদিনও তার দলের কাউকে দেখা যায়নি। 'বালির বাঁধের' এলাকায় তো নয়-ই, উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে কিছু আইনজীবী ছাড়া ঢাকা শহরের অন্য কোনো স্থানে একটা টুঁ-শব্দ করতেও দেখা যায়নি বিএনপিকে। এমন নয় যে, সরকারি বাহিনী গোলাগুলি ছুড়ে, মানুষ মেরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আপসেই নাকি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিপ্লবী নেতারা 'মেনেজড্' হয়ে গিয়েছিলেন। নেতারা না নামলে কর্মীরা কেন নামবেন?

তিন. ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মাঠ নেতা-কর্মীরা যা করার করেছে। ১৫৩ আসনে নির্বাচনই করেনি সরকার। ১৪৭ আসনের নির্বাচনও যেনতেন প্রকারে করে নিয়েছে সরকার। সাধারণ মানুষ সাড়া দিয়ে ভোট কেন্দ্রে না গেলেও নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি বিএনপি।

চার. চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আন্দোলনের নামে যা হয়েছে তা নিয়ে যত কম আলোচনা করা যায় ততই মঙ্গল। সেই তিন মাসে পেট্রলবোমা, অগ্নিসংযোগ ও নিরীহ মানুষ মারার যে নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে সরকার দক্ষতার সঙ্গে তার সব দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিতে পেরেছে। অথচ একটা ঘটনায়ও সরাসরি বা হাতেনাতে ধরে কাউকে অভিযুক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সব ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী নয়, এই কথাটাও তারা যথাযথভাবে জনগণের কাছে পৌঁছানোর যোগ্যতা দেখাতে পারেনি। কিছু নেতা জেলে ছিলেন ঠিক, সবাই তো জেলে ছিলেন না। অন্যরা কী করেছেন? এখানেও কথা আছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের কর্মচারীরা- যাদের অনেকে এক সময় কট্টর বিএনপিবিরোধী এমনকি জিয়াবিরোধী ছিলেন।

এত ব্যর্থতার পর স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক ভঙ্গুরদশার বিষয় আলোচনায় এসেছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর জন্যই দল পুনর্গঠনের আওয়াজ উঠেছে। দলের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর কথাও উঠেছে। কিন্তু নেতৃত্ব তো অন্য দল থেকে বা বিদেশি তারকা খেলোয়াড়ের মতো বিদেশ থেকে 'হায়ার' করে আনা যাবে না। দলের ভিতর যা আছে তা থেকেই তো সাজাতে হবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপিতে নেতৃত্বে তুলে আনার মতো লোকের অভাব হওয়ার কথা নয়। তাই বলে যাকে খুশি তাকে যেখানে সেখানে বসিয়ে দিলে আবারও পস্তাতে হবে দলটিকে।

যোগ্য লোককেই যোগ্যস্থানে রাখতে হবে, যা দলের বর্তমান স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটি গঠনের বেলায় বিবেচনা করা হয়নি। এবার নাকি চমক দেখানো হবে। কী চমক? মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসবে? প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে জাতীয় পরিচয়সমৃদ্ধ যোগ্য ও প্রবীণ অন্য যারা আছেন তাদের কারও নাম তো শোনা যাচ্ছে না। একবার শোনা গেছে তারেক রহমানের পছন্দের লোক বলে প্রচারিত কক্সবাজারের সালাহউদ্দিন আহমদের নাম, এবার বিলেতে নিয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হলো আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম- যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্বের বোঝাটা তার জন্য সামর্থ্যের অতিরিক্তই হয়ে যাবে। অন্য দলের নেতাদের কাছে, বুদ্ধিজীবী মহলে, মিডিয়ায় এবং সারা দেশে দলের লোক ও জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় আমির খসরু কি অগ্রগামী? এ ব্যাপারে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মী-সংগঠকের মতামত এবং সাধারণের মনোভঙ্গি বিবেচনায় নিলে আখেরে বিএনপির ভালো হবে। দেখা যাক, দেশে ফিরে বা বিলেত থেকে কী ফরমান জারি করেন পার্টি চেয়ারপারসন!

তৃতীয় বিষয় প্রসঙ্গে বলা যায়, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কোনো উদ্যোগ যদি বেগম জিয়া নিয়ে থাকেন তাকে পজিটিভ দৃষ্টিতেই দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষক। ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক তা অতি প্রাচীন ও দৃঢ়। কংগ্রেসের সঙ্গে বিএনপির পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কংগ্রেসের মতো হবে না কংগ্রেস-বিজেপি বৈরিতার কারণে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ভারত রাষ্ট্রেরও যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বিজেপির কাছে তাও মূল্যহীন নয়।

তারপরও ভারতের দলীয় রাজনীতির সমীকরণে বিজেপির সঙ্গে বিএনপির পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক স্থাপনের একটা স্পেস আছে। দুটি দলই নির্বাচনমুখী গণতন্ত্রের চর্চা করছে। প্রকাশ্যেই তারা কথাবার্তা বলতে পারেন। বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না যদি এমন খবর আসে যে, ভারতীয় জনতা পার্টির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিলেতে বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন; বা মা-ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে বিজেপির কোনো প্রতিনিধি দলের। হলে হোক না, মন্দ কী?-বিডিপ্রতিদিন

লেখক :সাংবাদিক, কলামিস্ট
৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে