রবিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৩৫:২৩

নির্বাচন দিলেই ওদের ভরাডুবির শংকা

নির্বাচন দিলেই ওদের ভরাডুবির শংকা

মাহবুব হাসান : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তন আসছে না। নির্বাচনের পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি করার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন হলে পুরনো নেতাদের ভরাডুবি হতে পারে- এমন আশংকা থেকেই তারা সমঝোতার কমিটি বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে কয়েকটি জেলায় নির্বাচন দেয়ার পর দেখা গেছে নতুনদের জয়জয়কার। এরপরই পদ ধরে রাখতে সমাঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বছরের পর বছর নেতৃত্বে থাকা জেলা নেতারা। আর রীতি অনুযায়ী ‘সমঝোতা কমিটিতে’ সায় মিলছে কেন্দ্রেরও। ফলে রুদ্ধ হচ্ছে নতুন নেতৃত্বের পথ। নির্বাচনকে প্রাধান্য না দিয়ে সমাঝোতাকে প্রাধান্য দেয়ায় দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৭৩টির মধ্যে ৪৮টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে- যার ৩৮টিতেই বহাল রয়েছেন আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আর গোপন ব্যালটের মাধ্যমে গঠিত নয় জেলার কমিটির আটটিতে নির্বাচিত হয়েছেন নতুন নেতা। যেসব জেলায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে, সেগুলো হল- রাজশাহী মহানগর, বরিশাল জেলা ও মহানগর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নাটোর এবং ফেনী জেলা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রতিবেদককে বলেন, সম্মেলনের কোথাও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে না, নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই সম্মেলন হচ্ছে।

তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমঝোতা বা নির্বাচন যেভাবেই হোক নতুন-পুরনো মিশ্রণের মাধ্যমেই কমিটি হচ্ছে।

তিনি বলেন, কমিটি করার জন্য প্রথমে সমঝোতার পথই বেছে নেয়া হয়। সমঝোতা না হলে নির্বাচন হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার নিজের জেলা সিরাজগঞ্জের উদাহরণ টেনে বলেন, এখানে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি হলেও শীর্ষ পদে দু’জনই নতুন এসেছেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দলের গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য-আদর্শ ঠিক রেখে সঠিকভাবেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেসব জেলায় এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আগামী এক মাসের মধ্যে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ করা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি জেলাগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন সংক্রান্ত দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ উল্লেখ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

এছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে দুটি শীর্ষ পদে বা কোথাও শীর্ষ পাঁচ পদে নেতৃত্ব ঘোষণা হলেও প্রায় সব জেলাতেই কমিটি অপূর্ণাঙ্গই থাকছে। তবে এমনও জেলা রয়েছে যেখানে চার বছর আগে কমিটি হওয়ার পরও তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। বরিশাল মহানগরে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটির একজন মৃত্যুবরণ করায় গত দু’বছর ধরে একজন দিয়েই চলছে জেলার মর্যাদাসম্পন্ন এই কমিটি। মাত্র যে ছয়টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়েছে সেগুলো হল- মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী।

নতুন কমিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব জেলায় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে কেবল সেগুলোর ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে বা নতুন নেতৃত্ব এসেছে। যেমন কুড়িগ্রাম জেলায় শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছে দুই নতুন মুখ- আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল এবং জাফর আলী। এমনিভাবে দিনাজপুর জেলার সভাপতি হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আজিজুল ইসলাম চৌধুরী। অবশ্য ফিজার আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজশাহী মহানগরে বজলুর রহমান ও এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন।

এখানেও বজলুর রহমান প্রথমবার শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন। নাটোরে অ্যাডভোকেট অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস সভাপতি এবং শরিফুল ইসলাম শিমুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শীর্ষ দুই পদে নাটোরে এ দু’জনই নতুন মুখ। বরিশাল জেলায় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তালুকদার মো. ইউনুস এবং বরিশাল মহানগরে শওকত হোসেন হিরন ও অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। এদের মধ্যে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক এবং শওকত হোসেন হিরন মহানগরের আহ্বায়ক ছিলেন। অবশ্য হিরনের মৃত্যুতে বরিশাল মহানগর এখন এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি নিয়ে চলছে। ফেনীতে নতুন সভাপতি হয়েছেন আবদুর রহমান বিকম এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নিজাম হাজারী। তারা দু’জনই স্ব স্ব পদে নতুন।

কিন্তু এর ঠিক বিপরীত অবস্থা অন্য জেলাগুলোতে। সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি হওয়া প্রায় সব জেলায় আগের নেতৃত্বই বহাল হয়েছে। যদিও সমঝোতার মাধ্যমে হওয়া কমিটিগুলোর একমাত্র সিরাজগঞ্জ জেলায় এসেছে নতুন নেতৃত্ব। সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি হওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি প্রতিবেদককে বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা এবং রীতি অনুযায়ী সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করাই সব সময় অগ্রাধিকার থাকে। কিন্তু যেখানে সমঝোতা হয় না সেখানে গঠনতন্ত্রের অন্যান্য নির্দেশনা বা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তিনি বলেন, জেলা সম্মেলন ও কমিটি গঠন নিয়ে দলের গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। দলের লক্ষ্য, আদর্শ এবং উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রেখেই জেলা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা সম্মেলন সমন্বয় করে থাকেন।-যুগান্তর
৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে