রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:০১:৩৯

হাসপাতালে কাঁদছে আলিফ, জানে না তার মা আর পৃথিবীতে নেই

হাসপাতালে কাঁদছে আলিফ, জানে না তার মা আর পৃথিবীতে নেই

নিউজ ডেস্ক: মাত্র দেড় বছরের শিশু আলিফ। দুই পায়ে ও বুকের বাঁ পাশে ব্যান্ডেজ করা তার। শরীরে রক্তের দাগ। কখনো ব্যথায় চিৎকার করছে। আবার কখনো ডাকছে মাকে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এক চাচি। কিন্তু আলিফ জানে না তার মা সালমা বেগম আর নেই। বাবা মমিনুল ইসলামও গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছেন হাসপাতালের শয্যায়।

গতকাল শনিবার সকাল নয়টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। এর ঘণ্টা দুয়েক আগে মির্জাপুর উপজেলার ইচাইলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় আলিফ। ওই ঘটনায় তার মাসহ নিহত হয়েছেন পাঁচজন। আহত হয়েছেন তার বাবাসহ ৩৫ জন। তাঁদের বেশির ভাগ পোশাকশ্রমিক। তাঁরা কুড়িগ্রাম থেকে বাস ভাড়া করে ঢাকায় আসছিলেন। পথে ইটবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ৭ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ দিনে সারা দেশে ৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩৪৬ জন।

মির্জাপুরে গতকালের ঘটনায় আহত হয়েছেন আলিফের চাচা মনির ও চাচি আঞ্জুয়ারা বেগমও। তাঁরাও কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আলিফকে নিজের বুকে চেপে রেখে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন আঞ্জুয়ারা। কিন্তু কোনোমতেই তার কান্না থামছে না।

আঞ্জুয়ারা বলেন, ‘অবুঝ শিশুর কান্না। ওর কষ্টে বুকটা আমার পুড়ে যাচ্ছে। আমার নিজের কোনো সন্তান নেই। মা হারা শিশুটিকে নিজের সন্তান হিসেবেই বড় করব।’

আলিফদের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কুটিপাড়া গ্রামে। দুর্ঘটনায় তার মা সালমা বেগম (২৫) ছাড়াও নিহত হয়েছেন উলিপুরের গোড়াইপিয়ার গ্রামের আমিনুর ইসলামের ছেলে বায়েজিদ (৭), রাজারহাট উপজেলার টাকিরপসারতালুক গ্রামের কাজল রায়ের ছেলে তিতাস চন্দ্র রায় (১১), একই গ্রামের সুমন চন্দ্র মোহন্ত (৩২) ও তাঁর স্ত্রী মিনিত্রা (২৮)। এর মধ্যে বায়েজিদ গোড়াইপিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও তিতাস গাজীপুরের কোনাবাড়ী আরিফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পুলিশ ও আহত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কুড়িগ্রামের নাজিমখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে জাবালে নূর পরিবহন লিমিটেডের একটি যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে আসে। গতকাল সকাল সাতটার দিকে মির্জাপুরের ইচাইল এলাকায় পৌঁছালে বাসটির সঙ্গে ইটবোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় যানের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বাসের দুই যাত্রী বায়েজিদ ও সালমা বেগম মারা যান। দুর্ঘটনার পর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। খবর পেয়ে মির্জাপুর থানা এবং গোড়াই হাইওয়ে থানা-পুলিশ ও মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান সুমন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুমনের স্ত্রী মিনিত্রা এবং কাজল রায়ের ছেলে তিতাস।

আহত কয়েকজন অভিযোগ করেন, চালক শুরু থেকেই বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। সকালের দিকে তিনি ঘুমের ঘোরের মধ্যে থেকে বাস চালিয়েছেন।

দুর্ঘটনায় বাসচালক শহিদও গুরুতর আহত হয়ে কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের বাবরগাতি গ্রামে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে তিনি ট্রাক চালাতেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি ঢাকায় বাস চালান। তিনি বাস নিয়ে আগের দিন কুড়িগ্রামে যান। যাত্রী নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন। পথে হঠাৎ একটি ট্রাক বাসের সামনে এসে পড়ে এবং ধাক্কা দেয়। এরপর আর কিছু তিনি বলতে পারেন না।

মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম গতকাল বিকেলে জানান, এই দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিক। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত বাসচালককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে বাড়ি পর্যন্ত লাশ পৌঁছানোর খরচ বাবদ ২০ হাজার ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।-প্রথম আলো
১৮ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে