রবিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৩০:৫৯

‘নাশকতার কৌশল পাল্টে মাঠে নেমেছে ওরা’

‘নাশকতার কৌশল পাল্টে মাঠে নেমেছে ওরা’

সৈয়দ আতিক : সরকারকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার বিরোধী শক্তি। সরকারবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তৃতীয়পক্ষ। তারা এক হয়ে দেশে এবং বিদেশে সরকারকে বিব্রত করতে কৌশল পাল্টে মাঠে নেমেছে। পেট্রলবোমা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার পর এবার বিদেশী নাগরিকদের প্রতি লক্ষ্য স্থির করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংসের নীলনকশার অংশ হিসেবে চক্রটি কূটনৈতিক জোনকে বেছে নিয়েছে।

গুলশানে ইতালি নাগরিক, রংপুরে জাপানি নাগরিক খুনের পর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমনটাই মনে করছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তাদের মতে, বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সরকারবিরোধীরা নাশকতার ধরন পরিবর্তন করেছে। সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, এ নিয়ে তারা কাজ করছে। দ্রুত একটি প্রতিবেদনও সরকারের উচ্চমহলকে দেয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি প্রতিবেদককে বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কৌশলে বিব্রতকর অবস্থা তৈরির চেষ্টা করছে। তারা চাইছে দেশের ভেতরে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হোক। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ করে আইনশৃংখলা বাহিনী যে কোনো নাশকতা দমনে সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধীরা আগে হরতাল দিয়ে ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারার রাজনীতি করেছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ অপরাধ করে পার পায়নি। তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এখন সরকারবিরোধী চক্রগুলো নতুন করে বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মরিয়া। এজন্য তারা নাশকতার প্যাটার্ন চেঞ্জ করেছে। যারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদের রেহাই নেই।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশে না আসা, ইতালি এবং জাপানের নাগরিক খুনের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এর একটির সঙ্গে অন্যটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। খুনের ঘটনা দুটোর মধ্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। গুলশানে ইতালির নাগরিককে মোটরসাইকেল যোগে এসে তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। রংপুরেও জাপানি নাগরিককে মোটরসাইকেল আরোহীরা তিনটি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য একইভাবে খুন করা হচ্ছে।

এ শক্তিটিই কিছুদিন আগে হরতাল দিয়ে গাড়িতে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ খুন করেছে। তখনও তারা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্যই এ ধরনের কাজ করেছে। সরকার প্রমাণ করে দিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য ধ্বংসাত্মক কাজগুলো করেছে। প্রভাবশালী প্রায় সবকটি দেশের কাছেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রায় একই শক্তি একই উদ্দেশ্যে কৌশল পরিবর্তন করে মাঠে নেমেছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকারবিরোধী চক্রটি বিদেশীদের কাছে প্রমাণ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো নয়। এখানে মানুষের নিরাপত্তা নেই। দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে বিদেশীরা অনিরাপদ। যাতে এখানে বিনিয়োগের জন্য বিদেশীরা আসতে ভয় পায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই বিদেশী নাগরিককে খুন করে। তাদের মতে, বাংলাদেশের মানুষ খুন করে বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব নয়। এজন্যই চক্রটি বিদেশী নাগরিককে টার্গেট করেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মনিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তি, ইতালি ও জাপানি নাগরিক হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনী সরকারবিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে যখন সক্ষম হয়েছে তখন তারা নতুন কৌশলে সরকার বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর যার নেপথ্যে রয়েছে সরকারবিরোধীরা। এ বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা সতর্ক রয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকায় ইতালি নাগরিক হত্যার পর পুরো রাজধানীজুড়ে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। আর তখন সরকারবিরোধী শক্তি সুযোগ নিয়েছে ঢাকার বাইরে। সোমবার গুলশানের পর শনিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়ায় হোসি কোনিও নামে এক জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। সরকারবিরোধী শক্তি আওয়ামী লীগ সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে যে নতুন প্যাটার্ন নিয়েছে এর অংশ হিসেবে জাপানি নাগরিককে খুন করা হয়েছে।

কারণ পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা বলছেন, বুধবার জাপানের ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। বৃহস্পতিবার দলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলোচনায় বসে। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের আলোচনার পর সরকারের প্রত্যাশা আগামী বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি বন্ধুপ্রতিম ও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার জাপানকে বিনিয়োগ করার জন্য গাজীপুরে ৫শ’ একর এবং নারায়ণগঞ্জে ১৫শ’ একর জমি দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। আর এ বিষয়ে জাপানি প্রতিনিধি দলের মিনিস্ট্রি অব ইকোনমি ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস মিনিস্টার ইয়োশিহিরো সেকি বাংলাদেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপানের এ আলোচনার দু’দিনের মাথায় শনিবার রংপুরে জাপানি নাগরিক খুন করে সরকারবিরোধীরা তাদের নতুন কৌশলের ‘দ্বিতীয় অপারেশনের’ শক্তি জানান দেয়।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ প্রতিবেদককে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট রাজনীতির সঙ্গে নতুন করে জঙ্গি নিয়ে শংকা তৈরি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এর সুবিধা নেয়ার সুযোগ খুঁজছে। বিশেষ করে এর মাধ্যমে প্রচারিত হল নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশে বিদেশী প্রতিনিধি আসতে ভয় পাবে, নতুন করে শংকা তৈরি হবে। ইতালিয়ান নাগরিক খুনের পর জাপানি নাগরিক খুনের ঘটনায় সেই শংকাকে ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করছে বাংলাদেশে একটা বিব্রবতর অবস্থা তৈরি করে সংকটে ফেলবে। এতে অবশ্য সরকারের বিরোধী শক্তি লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে।

আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারবিরোধীরা বিদেশী কোনো ডেলিগেট বা প্রতিনিধি আসার সময়কে এখন বেছে নিচ্ছে। এতে করে প্রতিনিধি দলের সফর বিঘ্নিত হবে আর তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারের আশায় তারা কাজটি করছে।

জানতে চাইলে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ইতালি ও জাপানি দুই নাগরিক হত্যার আগে খুনিরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের টার্গেট করেনি। এটা যে ষড়যন্ত্র তা প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি এ ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করেছে।-যুগান্তর
৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে