রবিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:০১:২৯

নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কিত কূটনীতিকরা

নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশে শঙ্কিত কূটনীতিকরা

রবিউল হক : বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকরা। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই বিদেশি খুন হওয়ার ঘটনায় তাদের এই শঙ্কা আরো বেড়েছে। নিরাপত্তাহীনতার এই শঙ্কা বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও প্রভাব পড়েছে। এসব ঘটনায় আইএসের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এবং ঘটনাগুলোর তদন্তে কূলকিনারা না হওয়ায় হতাশা রয়েছে তাদের। এরমধ্যে যুদ্ধাপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ঘটনায় কূটনীতিকপাড়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করেছে সরকার। এরপরও নিজেরা বৈঠক করে আরো নিরাপত্তা চেয়ে শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদেশি কূটনীতিকরা।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা এক কূটনীতিক প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশে অনেক দূতাবাসের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে থাকে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি দেশের দূতাবাস তাদের নাগরিকদের জন্য সম্প্রতি সতর্কতা জারি করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে সাধারণত নির্ভরযোগ্য কারণ থাকে। তাই এসব দেশগুলোর দেয়া সতর্কবার্তা একেবারে হেলাফেরা করার নয়।  

উল্লেখ্য, ঢাকায় সোমবার ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর গতকাল শনিবার রংপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জাপানি নাগরিক হোসে কোনিও(৬৬)। হোসে কোনিও নিহতের পর বাংলাদেশে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে দেশটি। গতকাল ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এ সতর্কতা নির্দেশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়, জাপানি নাগরিকরা অপহরণ, সন্ত্রাসবাদ ও হুমকির মতো সম্ভাব্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এজন্য নিজ দেশের নাগরিকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। এছাড়া অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য গাড়িতে ভ্রমণের সময় দরজা বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি খোলা যানবাহনে রিকশা, মোটরসাইকেল, হাঁটা কিংবা বাইসাইকেল চলাচল না করার পরামর্শ দেয়া হয়।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট জাপানি নাগরিক হোসে কোনিওর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিক যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন। তিনি কোনিওর পরিবার ও তার বন্ধুদের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছেন। গতকাল মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট এ শোক জানান।

এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের গতকাল সতর্ক করে বার্তা দিয়েছে ঢাকাস্থ দেশটির কনস্যুলেট অফিস। দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিও হত্যার ঘটনায় এ সতর্কতা জারি করা হয়। কনস্যুলেটের ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে এ সতর্কতা জানায় দেশটি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে। দেশের যে কোন স্থানে চলাফেরার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে সচেতনতা অবলম্বনেরও আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিককে হত্যার পর চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের তালিকা করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। চট্টগ্রামে  বিদেশিদের প্রবেশের ক্ষেত্রে আগে থেকে নগর পুলিশের বিশেষ শাখাকে অবহিত করা এবং আবাসিক হোটেলগুলোকে বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানের বিষয়ে নিয়মিত তথ্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আসা বিদেশি নাবিকদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বলে আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে জানান, ঢাকার পর চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি বিদেশি নাগরিক অবস্থান করেন। ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক সিজার ও শনিবার  রংপুরে জাপানি নাগরিক ওসি কনিওকে হত্যার পর চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সব পুলিশ স্টেশনকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি চেকপোস্ট ও  টহল বৃদ্ধি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৩০টি পয়েন্টে তল্লাশি চলছে। স্থাপন করা হয়েছে সারপ্রাইজ চেকপোস্টও। প্রত্যেক চেকপোস্টে থ?ানা এবং ফাঁড়ি থেকে দশজন করে ফোর্স অংশ নিচ্ছে। উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এবং সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা চেকপোস্টের কার্যক্রম তদারক করছেন বলে জানান তিনি।

খুলনা জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব বিদেশি নাগরিকরা চার্চ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেবা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কর্মরত। খুলনায় কর্মরত বিদেশিদের মধ্য যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া, ইতালি, চীন, জাপান ও থাইল্যান্ডের নাগরিকই বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে বিভিন্ন এনজিওর ব্যানারে বিদেশি নাগরিকরা আসতে শুরু করেন। ৮০’র দশকে তাদের আগমনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক ও ব্যাপটিস্ট চার্চে ধর্ম যাজকদের পাশাপাশি তাদের অনুসারীরা আসতে শুরু করেন। খুলনার সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর, মহেশ্বরপাশা, রূপসা উপজেলার নৈহাটি, বটিয়াঘাটা ও দাকোপের চালনা এলাকাতেই বেশিরভাগ বিদেশি অবস্থান করেন।

গোয়েন্দারা তাদের রাত্রিকালীন অবস্থানগুলোর ওপর নজরদারিও রাখছেন বলে আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতের মতো বৃহৎ শক্তিগুলোর শীতল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে দেশগুলো মরিয়া। কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নীতি বজায় রাখতে গিয়ে মাঝখানে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্লেষকদের কারো কারো মতে, দেশের প্রধান দুই দলের সংঘাতের কারণে রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন উগ্র-মতবাদের দল। তারা রাজনীতির মাঝমাঠে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে। তাদের ওই চেষ্টা রাজনৈতিক দিক থেকেই শুধু নয়, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার দিক থেকেও বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।-মানবকণ্ঠ
৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে