মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:১৫:৪০

বিরোধী দলকে দমন করতে প্রশাসনিক কমিটি : বিএনপি

বিরোধী দলকে দমন করতে প্রশাসনিক কমিটি : বিএনপি

নিউজ ডেস্ক : বিরোধী দলকে দমন করতে সরকার দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার নামে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা মনে করি, সরকার আসলেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে চায় না। তারা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে দমন করতে চায়। তাই জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে সরকার শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে।

তিনি বলেন, এসব কমিটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা-কাল্পনিক অভিযোগে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করে গ্রেপ্তার ও হয়রানির মাধ্যমে সরকার প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল ও উৎসাহিত করছে। এ সময় তিনি ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান বিএনপির প্রবীণ এই নেতা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা অবস্থায় যশোরে উদীচীর সম্মেলনে, রমনা বটমূলে, পল্টনে সিপিবি সমাবেশে, গোপালগঞ্জে গির্জায় বোমা হামলা হয়। ওই সব হামলায় প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে বিএনপিকে হেয় ও নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যায় এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিগুণ উৎসাহে আরো ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে থাকে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনআকাঙক্ষা ছিল দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা। এখন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে যদি বলা হয়, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে, তাহলে তো এটা ভুল। তার ওপর আবার সরকার শুধু তাদের নেতাকর্মীদের দিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি করেছে।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে সামপ্রতিক উগ্রবাদী হামলার পরপরই বিএনপি এর বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিএনপিসহ বিরোধী দলকে হীন উদ্দেশ্যে দোষারোপ করে ইচ্ছাকৃতভাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। সে জন্য আমরা এর নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের মতো করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টাকে আরো শক্তিশালী করতে, আরো যে রাজনৈতিক দল আছে, তাদেরকে নিয়ে আমরা হয়তো সাংগঠনিকভাবে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করব। সেটা যখন হবে, তখন আপনাদের জানানো হবে। দেশে অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটছে। এই অবস্থা উত্তরণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেন নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের এ সদস্য বলেন, অনৈতিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কানাডায় বলেছেন, নারী নির্যাতনে জিরো টলারেন্সে তার সরকার। অথচ একইদিন পত্রিকায় এসেছে সাতক্ষীরায় এমপিপুত্রের নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা। নারী ও শিশু নির্যাতন আজ দেশের নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নারী পাশবিক নির্যাতনের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আজও গণমাধ্যমে নির্যাতিতা নারীর আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, একদিকে লবণের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্বিকার। এসব ঘটনা প্রমাণ করছে সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ও অযোগ্য। এছাড়াও ঈদের সময়ে যানবাহন সংকট, ব্যাপকহারে সড়ক দুর্ঘটনা, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সরকারি দলের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলে হতাহতের তথ্য দিয়ে এসব ঘটনায় সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেন নজরুল ইসলাম খান।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তকদির হোসেন জসিম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান ও বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। -এমজমিন

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে