শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০১:২৬:৩৯

পাক-ভারত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা

পাক-ভারত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা

মিজানুর রহমান : পাক-ভারত উত্তেজনার মাঝে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সৃষ্ট পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। একই সঙ্গে অন্য আঞ্চলিক ফোরামে আরো সক্রিয় হওয়ার বিষয়টিও ভাবছে বাংলাদেশের নেতৃত্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও আফগানিস্তান আগামী নভেম্বরে ইসলামাবাদে প্রস্তাবিত ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

বর্জনকারী ৪ দেশই তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যাসহ নোটভারবাল পাঠায় সার্কের বর্তমান চেয়ার নেপাল এবং কাঠমান্ডুস্থ সংস্থাটির সচিবালয়ে। বুধবার রাতে নেপাল শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেয়া সংক্রান্ত ৪ দেশের চিঠি (ডিপ্লোম্যাটিক নোট) পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে নেপাল। বিজ্ঞপ্তিতে কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বা সম্মেলন স্থগিতের বিষয়ে কিছু না বলে উদভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের অনুকূল বা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

নেপালের এই অবস্থানের বিষয়টিও বাংলাদেশ পর্যবেক্ষণ করছে উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, অতীতে বিভিন্ন দেশের আপত্তি বা অপারগতার কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন বহুবার হোঁচট খেয়েছে। তারিখ পরিবর্তন করে দেরিতে হলেও সম্মেলন হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হোস্ট কান্ট্রিকে ব্লেম বা দোষারোপ করে এক সঙ্গে ৪ রাষ্ট্রের শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের ঘটনা নজিরবিহীন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সম্মেলন নিয়ে শুধু অনিশ্চয়তাই নয়, সংস্থাটির ভবিষ্যৎ গভীর সংকটের মুখে পড়লো।

ওই কর্মকর্তার মতে, সার্ক নিয়ে এখন অনেক ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। পাকিস্তান যেভাবে চাপে পড়েছে তারা এ থেকে উদ্ধারে কূটনৈতিকভাবে হয়তো চেষ্টা করবে। এখনো সার্কের দুটি দেশ প্রতিক্রিয়া দেখানোর বাকি। মালদ্বীপ এবং নেপাল। কলম্বো একটি প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারা স্পষ্ট করেই বলেছে, ভারত না গেলে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে তারা ভারতের অংশগ্রহণের পথ সুগম করার বার্তা দিয়েছে। নেপালের তরফেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ‘দ্রুত সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি’র আহ্বান জানানো হয়েছে। সে হিসাবে এখন বাকি শুধু মালদ্বীপ। তাদের দিয়ে পাকিস্তান বর্জনকারী ৪ দেশের সঙ্গে মধ্যস্থতার চেষ্টা করতে পারে এমন খবর বেরিয়েছে। আদৌ কি হয়? সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সেগুনবাগিচার কর্তা ব্যক্তিরা।

এদিকে সার্ক সম্মেলন বয়কটই শুধু নয়, পাকিস্তানকে অন্য প্রতিবেশীদের থেকে একেবারে একঘরে করার যে আয়োজন চাউর হয়েছে দিল্লি থেকে তার ওপর নজর রাখছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে ইসলামাবাদ যেভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে আসছে তাতে দেশটির নেতৃত্বের ওপর ত্যক্ত বিরক্ত বাংলাদেশের নেতৃত্ব। বাংলাদেশ পাকিস্তানের এমন বিরক্তিকর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে পদে পদে। একই সঙ্গে তা বন্ধে দেশটির নেতৃত্বের প্রতি ঢাকার আহ্বান ছিল বরাবরের মতো। কিন্তু না, ইসলামাবাদ তার অবস্থান থেকে একচুলও সরেনি বরং বিরক্তির মাত্রা ক্রমে আরো বাড়িয়েছে।

বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, শুধু বাংলাদেশ, ভারতই নয়, এ অঞ্চলে প্রায় সবার সঙ্গেই পাকিস্তানের কমবেশি টানাপড়েন রয়েছে। গত বছর পর্যন্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে ইসলামাবাদে হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনও হয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সন্ত্রাসে জীর্ণ আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের জন্য  তৈরি হওয়া ‘হার্ট অব এশিয়া’র এবারের আয়োজক দেশ ভারত। আগামী ডিসেম্বরে সম্মেলনটি হবে ভারতের অমৃতসরে। বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে তৈরি এই গোষ্ঠীতে রয়েছে পাকিস্তানও। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছেন। সার্কসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদেরও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয় পাকিস্তান সেখানে যোগ দেয় কি-না?

সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনে ভারতসহ ৪ রাষ্ট্রের ঘোষণা পরবর্তী পরিস্থিতিতে অমৃতসরে চোখ থাকবে সবার। দিল্লির বিদেশমন্ত্রক সূত্রে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে সমান্তরাল সার্ক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার খবর বেরিয়েছে। বিষয়টি ঢাকার কর্মকর্তাদের বিবেচনায় উপস্থাপন করা হলে তারা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেখাতে রাজি হননি। এক কর্মকর্তা শুধু বলেন, স্থল যোগাযোগের আঞ্চলিক নোটওয়ার্ককে আরো সক্রিয় করতে সার্কের উদ্যোগ ছিল। কিন্তু সেখানে বাগড়া দেয় পাকিস্তান। তাদের কোনোভাবেই অববোর্ডে আনা যায়নি। এক বছর অপেক্ষার পর সেই উদ্যোগ থেমে থাকেনি।

পাকিস্তানকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল- চতুর্দেশীয় বিবিআইএন নেটওয়ার্ক এখন অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বিবিআইএন এখন এ চার দেশের সফলতার উদাহরণ উল্লেখ করে সেগুনবাগিচার ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত সন্ত্রাসবিরোধী একটি আঞ্চলিক বা উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের কথা ভাবছে। এটি সার্কের সমান্তরাল না হলেও সেই কাঠামোকে অনুসরণ করে হতে পারে। সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশ এমন উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে বলে আভাস দেন ওই কর্মকর্তা। তার মতে, উন্নয়ন, যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী কাজকর্মে আঞ্চলিক যে কোনো ফোরামে বাংলাদেশ সক্রিয় থাকবে। - এমজমিন

৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে