শনিবার, ০১ অক্টোবর, ২০১৬, ১০:১১:১০

এক হাজার টাকায় দুজনের পুরো মাস

এক হাজার টাকায় দুজনের পুরো মাস

আহমেদ উল হক রানা: ৭৫ বছর বয়সে এসে জীবনের হিসাব মেলে না। সন্তান থেকেও যেন নেই। এক হাজার টাকায় পুরো মাস চালাতে হয়। এ কারণে পাবনার শালগাড়ীয়া মহল্লার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শামসুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর বেশির ভাগ দিন কাটে সামান্য কিছু খাবার খেয়ে।

আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য দূরীকরণ’। জাতিসংঘ বার্ধক্যকে মানবজীবনের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে এ সমস্যা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সম্প্রতি এ প্রতিবেদক কথা বলেছেন ওই প্রবীণের সঙ্গে।

পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা গ্রামের মজিবল হকের (মৃত) দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় শামসুল আলম। ১৯৪১ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। পাবনা শহরের বাসিন্দারা প্রায়ই তাঁকে দেখেন বৃদ্ধা স্ত্রীর হাত ধরে প্রধান সড়ক ধরে হেঁটে যেতে; কখনো দোকান থেকে টুকিটাকি কিনতে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে দেখা একটি দোকানে। কিন্তু নিজের কিছুই জানাতে চান না হতাশা ও লজ্জায়। আলাপের এক ফাঁকে হঠাৎই যেন বাঁধ ভেঙে গেল তাঁর।

তিনি জানান, পাবনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে স্নাতকোত্তর পাস করার পর ১৯৭১ সালে চাকরি পান ঢাকা সিটি কলেজে। স্বাধীনতাযুদ্ধের কারণে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া হয়নি। ১৯৭২ সালে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন পাবনা সরকারি বুলবুল কলেজে। প্রায় ২৭ বছর সেখানে শিক্ষকতা শেষে ১৯৯৯ সালে অবসরে যান। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৩ সালে বিয়ে করেন রওশন আরা খাতুনকে। তাঁদের এক মেয়ে রয়েছে।

শামসুল আলম বলেন, ‘আমার সবই ছিল, সবই আছে, আবার কিছুই নেই।’ তিনি জানান, একমাত্র মেয়েকে লিখে দিয়েছেন শেষ সম্বল জায়গাটুকু। তখন মেয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যত দিন বেঁচে থাকবেন তত দিন মা-বাবার দেখভাল করবেন। কিন্তু বছর খানেকের মধ্যে মেয়ে প্রতিশ্রুতি ভুলে এখন বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভিটে থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ওই বাড়ির ছোট একটি ঘরে রওশন আরা খাতুন-শামসুল আলম দম্পতির জীবন চলছে থেমে থেমে। অসুখ-বিসুখে দেখাশোনার কেউ নেই। প্রতিদিন তিনবেলার খাবার জোগাড় করতে হয় নিজেদেরই। মাসিক পেনশন পান এক হাজার টাকারও কম। এই টাকা আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়। প্রায়ই সকালে কিছু খাওয়ার পর বিকেল পর্যন্ত তাঁদের থাকতে হয় না খেয়ে। পাউরুটি, কলা বা এ জাতীয় কিছু কিনে এর একটা অংশ দিয়ে রাতের খাবার সারেন স্বামী-স্ত্রী। বাকিটা পরদিন সকালে মুখে দিয়ে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে পড়েন। হৃদরোগ, গ্যাসট্রিক, আলসার, প্রোস্টেটে সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগ তাঁদের শরীরে। কখনো মেয়ে জামাই টাকা-পয়সা দিলে কিছুদিন তা দিয়েই চলে চিকিৎসা। তাঁর অনেক ছাত্র দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তাঁদের কাছে তিনি যেতে চান না লজ্জা ও হতাশায়। এ প্রতিবেদকে তিনি কোনো ছাত্র, মেয়ে বা জামাইয়ের নাম বলেননি।

সারা জীবন শিখিয়েছেন ছাত্রদের। এবারও তাঁদের জন্য তাঁর পরামর্শ, ‘আমার মতো কেউ যেন ভুল না করেন। প্রত্যেকেই সুযোগ থাকতে যেন জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা ভেবে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা করে রাখেন।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানকে মা-বাবার ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা ও পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। না করলে তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের জেল হতে পারে।

এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) রেখা রানী বালো বলেন, ‘বয়স্ক বা প্রবীণদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি কোনো নির্দেশনা বা উদ্যোগ নেই। স্থানীয়ভাবে কেউ করতে চাইলে তাকে প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’-কালের কন্ঠ
১ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে