মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ০৬:০৫:৩২

পুলিশের থাপ্পড় খাওয়া সেই ভ্যানচালক পেলেন ৫০০ টাকা

পুলিশের থাপ্পড় খাওয়া সেই ভ্যানচালক পেলেন ৫০০ টাকা

এমএম কবীর :‘পুলিশের থাপ্পড়ই আমার সারাদিনের ইনকাম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর জয়দেবপুর থানার এসআই আজিজুল হক ভ্যানচালক জালালের বাড়ি লেচুর বাগানে গিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে এসেছেন।

সোমবার দুপুর ৩টায় তিনি ভাড়া বাবদ ৫০০ টাকা দিয়ে আসেন।

প্রথমে জালালের বউ টাকা নিতে অস্বীকার করলে ওই এসআই ধমক দিয়ে বলেন, ‘এতবড় সাহস টাকা নিবে না।’ তারপর তারা টাকা নেয়।

জালাল বলেন, ‘দুই হাজার দেওয়া হবে বলে পুলিশ ভ্যান নিয়েছিল। আজ জোর করে ৫০০ টাকা দিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে ওইদিন মেরেছিল পুলিশ এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।’

জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হক পরিবর্তনকে বলেন, ‘টাকা দিয়ে এসেছে ভালো কথা। অসৌজন্যমূলক কিছু বলে থাকলে আরো খারাপ করেছে।’

এ কথা বলার পর ওসি ফোন কেটে দেন। বারবার চেষ্টা করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শনিবার গাজীপুরে নিহত দুই জঙ্গির লাশ বহনের জন্য তরকারি বিক্রেতা জালাল মিয়াকে ভ্যান নিয়ে যেতে বলে পুলিশ। রাজি না হওয়ায় পুলিশের এসআই আজিজুল হক শত শত লোকজনের সামনে জালাল মিয়াকে থাপ্পড় মারেন। এরপর গাড়ির মালামাল ছুড়ে ফেলে দেয়।

ওইদিন দুপুরের পর কিছু সবজি কিনে বাসায় এসে জালাল জানতে পারেন পাশেই দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। তিনি বারান্দার কাছে ভ্যান রেখে লাশ দেখার জন্য ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার ছেলে ডাক দিয়ে বলে, বাবা পুলিশ তোমারে ডাকছে।

জালাল দ্রুত ভ্যানগাড়ির কাছে গিয়ে বলেন, স্যার কিছু লাগবে। উপ-পরিদর্শক আজিজুল হক তখন বলেন, ‘চল ভ্যান গাড়ি নিয়ে লাশ নিতে হবে।’

জালাল মিয়া পুলিশকে (আজিজুল হক) উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্যার তরকারি নিয়া আইছি কিছুক্ষণের মধ্যে বাজারে যাইয়াম।’

জালাল মিয়ার ভাষ্যমতে : এসআই আজিজুল হক ধমক দিয়ে জালালের ঘাড়ে শতশত মানুষের মাঝে জোরে দুটি থাপ্পড় মারে। এরপর গাড়ির মালামাল ছুড়ে ফেলে দেয়। বাধা দিলে এসআই বলেন, গাড়িগুড়ি সব খাইয়্যা ফালাইয়্যাম। পরে পুলিশ তাগাদা দেয় লাশ নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে।

জালাল ভয়ে কাঁপতে শুরু করে পুলিশকে বলেন, ‘স্যার আমি যেতে পারব না। কারণ আমি লাশ দেখে ভয় পাই। তখন আরেক পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিদের লাশ ভেতর থেকে এনে ভ্যানে তুলতে বাধ্য করা হয় জালালকে। এরপর (আজিজুল হক) বলেন, ‘তোর ভাড়া দেওয়া হবে। দুই হাজার টাকা দিব চল। আমি নতুন আসছি বেশি টাকা পয়সা নাই চল।’

জালাল ভয়ে ভেতরে গিয়ে আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দুটি লাশ ভ্যানে তুলে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। লাশগুলো রাখার পর আরেক কনস্টেবল তাকে এককাপ চা ও ১টি রুটি খেতে বলে লাশ কাটা ঘরে বসিয়ে রেখে যায়। কিছুক্ষণ পর উপ-পরিদর্শক আজিজুল হক বলেন, ‘যাগা ভ্যান লইয়্যা, তরকারি বিক্রি কর পরে দেখা করিস।’

ভ্যানওয়ালার বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসার বিষয়ে এসআই আজিজুল হক বলেন, ‘ওইদিন তাকে টাকা নেওয়ার জন্য থানায় আসতে বলেছিলাম। আসেনি। তাই বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে এলাম।’

ভ্যানওয়ালার স্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্য আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘না। আমি এরকম কিছু করিনি।’

এ ব্যাপারে গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশীদকে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা পাওয়া যায়নি।-পরিবর্তন
১১ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে