মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:০৫:৪১

‘আপনারা লিখে দিয়েন প্রধানমন্ত্রী যেন এই ঘটনার বিচার করে’

‘আপনারা লিখে দিয়েন প্রধানমন্ত্রী যেন এই ঘটনার বিচার করে’

নিউজ ডেস্ক : ‘আমরা দেশের বাইরে থাকি, দেশকে রেমিটেন্স পাঠাই। দূরে বইসা দেশকে মনে করি শাপলা ফুল, নিজের বাইচ্ছা (সন্তান)। আজ আমার নিজের ঘরের শাপলা ফুল ভাঙি গেছে, আমি চাই না আর কারও ঘরে এই ঘটনা ঘটুক। আমি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির কাছে আপনাদের মাধ্যমে অনুরোধ জানাই, আপনারা আমার শাপলা ফুলটিকে দেখে যান। আর কতো বাপের ঘর এভাবে নষ্ট হবে এটার জবাব দিয়ে যান?'
 
সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে এভাবেই নিজের কষ্ট প্রকাশ করছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের বাবা সৌদি প্রবাসী আলহাজ মাসুক মিয়া। ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের ছুরির কোপে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন খাদিজা।
 
মেয়ের ওপর এমন নৃশংস হামলার খবর পেয়ে গত ৬ অক্টোবরেই দেশে ফিরেছেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২ তারিখে মাইয়ার সাথে শেষ কথা অইছে। ৩ তারিখ ফোন দিছিলাম রিসিভ করে নাই। পরে ওর মা কইছে ওর পরীক্ষা আছে। পরীক্ষার পর ফোন দিবে। কিন্তু আর দেয়া হলো না আমার মাইয়ার। আমার মাইয়ার কী দোষ ছিলো?' প্রশ্ন রাখেন তিনি। 'আমার বাইচ্ছার ওপর এ ঘটনার বিচার চাই।'
 
খাদিজার ওপর নৃশংস হামলার ৭ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু ওই নৃশংস ঘটনা এখনও আতংক ছড়ায় গ্রামে। পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি খাদিজার পরিবার।
 
সোমবার নগরীর সদর উপজেলার আউশা গ্রামে গিয়ে সত্যটা মিললো তার। পুরো গ্রামে যেন নিস্তব্ধতার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে কেউ। আউশা গ্রাম কোনদিকে এমন প্রশ্ন করতেই অটোরিকশা চালক বুঝে গেলেন আগতরা খাদিজার বাড়ির যাত্রী। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিনিট বিশেকের পথ আউশা গ্রাম।
 
চার ভাই-বোনের মধ্যে খাদিজা দ্বিতীয়। নৃশংসতার খবর শুনেই চীন থেকে ছুটে এসেছেন খাদিজার বড় ভাই শারনান হক শাহীন। চীনেরই একটি বেসরকারি মেডিকেলে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
 
এতোদিন হাসপাতালে বোনের পাশেই ছিলেন তিনি। সোমবার সকালে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়িতে গিয়েই দেখা মিলল তার। খাদিজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানালেন, তার অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। এখন ডান হাত ও ডান পা নাড়াতে ও চোখ খুলতে পারেন। ডাক্তাররা বলেছেন, আরো তিন/চারদিন না গেলে পুরো ব্যপারটা বোঝা যাবে না। খাদিজার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।
 
ঘাতক বদরুলের বিষয়ে তিনি বলেন, 'শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, ভালো ছাত্র। সে হিসেবেই তাকে আমাদের বাড়িতে লজিং নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুই মাস পরেই তাকে বাড়ি থেকে বের দেই।'
 
ঘটনা প্রসঙ্গে খাদিজার ভাই বলেন, 'এমন একটা কাজ বদরুল করেছে যা কল্পনা বহির্ভূত। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমরা। আমরা চাই তার সর্বোচ্চ সাজা হোক এবং সেটা অতি দ্রুত।'
 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তার অনুরোধ, বদরুলকে যেন অচিরেই স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। চীনে তার বন্ধুরা সোমবার খাদিজা’র ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বলে জানালেন তিনি।
 
উঠানে চুপচাপ বসে ছিল খাদিজার ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের। অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছে আদরের বড় বোনের অনুপস্থিতি ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছে সে।
 
‘আপনারা লিখে দিয়েন প্রধানমন্ত্রী যেন এই ঘটনার বিচার করে। আজ আমার বোন, কাল তো আরেকজনের বোনও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে’ পাশ থেকে ব্যথিত কণ্ঠে নিজের মনোভাব প্রকাশ করলেন খাদিজার ফুফাতো ভাই নোমান।
 
তার প্রশ্ন, ‘আর কতো ঘটনা ঘটলে দেশের মেয়েরা নিরাপদ হবে?'। এসময় নোমান তার বোন খাদিজাসহ তনু, রিসা, রাজনসহ সকল বর্বর ঘটনার বিচার দাবি করেন।
 
একটু পর পর বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। খাদিজার মেঝো ভাই শামীম বললেন, 'কাঁদতে কাঁদতে আম্মা নিজেই অসুস্থ। কথা বলার কোনো অবস্থা নেই উনার সাথে।'

এদিকে খাদিজার সঙ্গে হাসপাতালে এখন সার্বক্ষণিক আছেন তার মামা আব্দুর রশিদ। খাদিজার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
 
শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে খাদিজার বাড়িতে ছুটে আসছেন অনেকেই। এছাড়া সর্বশেষ তথ্য জানতে সাংবাদিকদের ভীড় তো আছেই।
 
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যান সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম (২৭)। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
 
খাদিজা বর্তমানে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। -যুগান্তর।
১১ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে