চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র সরকারী দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামারে ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে খামারের ১৩২ টি গরুর সব কয়টি ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে মারা গেছে চারটি গরু। অথচ এ খামারটিতে ২০০২ সাল থেকে একমাত্র ভেটেরিনারী সার্জনের পদটি শূন্য।
ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাবে দুধ উৎপাদনের পরিমাণও কমে গেছে বলে জানান খামারের পশু উৎপাদন কর্মকর্তা সাদ মোহাম্মদ নেহাল উদ্দীন মিয়া। স্থায়ীভাবে একজন ভেটেরিনারী সার্জন পদায়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। খামারে বর্তমানে বিভিন্ন জাতের গরুর মধ্যে দুধেল ২৮টি, দুগ্ধবিহীন ও গর্ভবতী ২৫টি, ষাড় ২টি, এঁড়ে বাছুর ২৯টি, বকনা বাছুর ৪৪টি। এর মধ্যে ২টি বকনা বাছুর ও ২টি দুধেল গরু মারা গেছে। দৈনিক ২ শত লিটারের অধিক উৎপাদন বর্তমানে নেমেছে ১ শত ৩০ লিটারে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন খামার পরিদর্শনে গেলে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র সরকারি খামারটি হাটহাজারীর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পশ্চিমে আলামপুর গ্রামে ৮২ একর জমির ওপর ১৯৯২-৯৩ অর্থ বৎসরে নির্মিত হয়। ১৯৯৫ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ খামারটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত জনবল সংকট নিয়েই চলছে খামারটি।
গত ১ সপ্তাহে এ খামারের গবাদি পশুগুলোতে দেখা দিয়েছে ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব। ১৩২ গরুর মধ্যে ৪টি গরু মারা গেছে। গত ৪ অক্টোবর থেকে প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। দুধেল গাভী ও বকনা বাছুরের অবস্থা সংকটাপন্ন। গত ৫ অক্টোবর ঢাকা পশু সম্পদ অধিদফতর থেকে ইপিডেমিওলজির প্রধান ড. মো. সাইফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে গঠিত টিম পরিদর্শনে আসেন। তাছাড়া গত বুধবার পশু সম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (উৎপাদন) ডা. আজিজুর রহমানও পরিদর্শনে আসেন।
ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় পাবর্ত্য জেলা থেকে ডেপুটেশনে এনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। যেহেতু এ খামারে ১৪ বছর যাবৎ ভেটেরিনারী সার্জনের পদটি শুন্য। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারী সার্জন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে খামারে গবাদি পশুর চিকিৎসার দেখভালের দায়িত্বে আছেন। কিন্ত ১ বছর যাবৎ উক্ত পদটিও শুন্য বলে জানান উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আইয়ুব মিয়া রানা।
খামারের পশু উৎপাদন কর্মকর্তা বলেন, জরুরী সংকট মোকাবিলায় পার্বত্য জেলা বান্দরবান আলী কদম উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুনায়েদ এর নেতৃত্বে দু’জন ভেটেরিনারি মাঠ সহকারি দিনরাত কাজ করছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে নিয়মিত নিবিড় চিকিৎসার মাধ্যমে খামারের গবাদি পশুগুলোকে সুস্থ করে তোলা হচ্ছে। নিয়মিত ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। পশু সম্পদ অধিদফতর থেকে প্রেরিত টিম এর নেতৃত্বে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসীম এ রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে জানান, ঈদুল আজহার পর থেকে সমগ্র চট্টগ্রামে ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এটি একটি ছোঁয়াছে রোগ। গ্রামাঞ্চলে এ রোগ ক্রমাগত ছড়াচ্ছে। তবে জেলা দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামারে এ রোগ দমনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ও ভ্যাকসিন প্রয়োগে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।-মানবকণ্ঠ
১৪ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস