রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০৮:২০:৩৭

অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ওয়ার্ডবয়, চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী

অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ওয়ার্ডবয়, চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী

আসাদুজ্জামান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সকালে যে অ্যাম্বুলেন্সের চাপায় চারজন নিহত হন, সেই অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ওই হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয়। তাঁর নাম মো. মাহফুজ। তিনি চালকের সহকারী সোহেল মিয়াকে (১৮) রাস্তা থেকে অ্যাম্বুলেন্সটির জরুরি বিভাগের সামনে আনতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সটি জরুরি বিভাগের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে নিয়ে আসার সময় ব্রেকে চাপ না দিয়ে অ্যাকসেলেটর চাপ দেন। এতে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।

ঘটনাস্থলে মারা যান তিন ব্যক্তি। পরে সন্ধ্যায় গর্ভের সন্তানসহ মারা যান আরও এক নারী। এ ঘটনায় চালকের সহকারী সোহেল মিয়াকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটিও। ওয়ার্ডবয় মাহফুজের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই অ্যাম্বুলেন্সটির মূল চালক মো. সোহাগ ও মালিক মাহফুজ গা ঢাকা দিয়েছেন।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মাহফুজ। তাঁকে আসামি করা হচ্ছে। কারণ তাঁর নির্দেশেই সোহেল অ্যাম্বুলেন্সটি চালিয়ে জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটির মূল চালক সোহাগ শুক্রবার দিবাগত রাতে একটি লাশ নিয়ে ঢাকার বাইরে যান। ফিরে আসেন ভোরে। সকালে ওয়ার্ডবয় মাহফুজ আরেকটি লাশ নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে চালকের সহকারী সোহেলকে জরুরি বিভাগের সামনে যেতে বলেন।

ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটির মূল চালক সোহাগ সারা রাত দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মাহফুজ হাসপাতালে চাকরি করার কারণে আরেকটি লাশ বহনের ভাড়া ঠিক করেন। এ কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। অ্যাম্বুলেন্সটির বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক খাজা আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চাকরি করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা করা পুরোপুরি বেআইনি। যদি অ্যাম্বুলেন্সটির মালিক তাঁদের হাসপাতালের কর্মচারী হন, অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। হাসপাতালের সামনের অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডটিও অবৈধ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক শনিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ৭০-৭৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকে। এই অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বেশির ভাগেরই মালিক হাসপাতালের কর্মচারীরা। রাস্তার ওপর অ্যাম্বুলেন্স রাখার জন্য নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে হয় পুলিশকেও। সকালে এই দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সটকে পড়েন চালকেরা। সন্ধ্যার পরও অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড ছিল পুরোপুরি ফাঁকা।

অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড থেকে পুলিশ চাঁদা নেয়—এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আর এই অবৈধ স্ট্যান্ড অপসারণ করতে হলে সবার সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।

শনিবার সন্ধ্যার পর হাসপাতালে গিয়ে ওয়ার্ডবয় মাহফুজকে পাওয়া যায়নি। তিনি ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডে চাকরি করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওয়ার্ডবয় জানালেন, শুনেছি মাহফুজের অ্যাম্বুলেন্স চাপায় লোক মারা গেছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি মাহফুজকে দেখেননি।

চালকের সহকারী সোহেলের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া বলেন, সোহেল ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারে না।

অ্যাম্বুলেন্স চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান রিকশাচালক মো. ফেরদৌসের স্ত্রী গোলিনুর ও সাত বছরের ছেলে সাকিব। সাকিবের চিকিৎসার জন্য স্ত্রী-ছেলেকে ঢাকায় আনেন ফেরদৌস। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে রিকশায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে। তাঁর কাছে খুচরা টাকা ছিল না। রিকশা ভাড়া দিতে টাকা খুচরা করতে পাশে যান। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সটি সজোরে রিকশায় আঘাত করে। ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় কেঁদে উঠে ফেরদৌস বলেন, পাঁচ মাসের শিশু সন্তান রেখে গেছেন তাঁর স্ত্রী। কীভাবে এই শিশুকে বাঁচাবেন!

গর্ভের সন্তানসহ মারা যাওয়া আমেনা বেগমের স্বামী জাকির বলেন, দুই মাস আগে তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। তাঁর দেখাশোনা করার জন্য তাঁর স্ত্রী তার সঙ্গে ছিল। তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। একই ঘটনায় আহত হয় জাকিরের সাত বছরের ছেলে সজীব। হাসপাতালের ২০৩ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন সে। মা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকেই হাউমাউ করে কাঁদছে সজীব।-প্রথম আলো
১৬ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে