রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:২৫:০৫

আল্লামা আহমদ শফীর বেফাকের বিপরীতে মাসঊদের নেতৃত্বে আসছে নতুন কওমি বোর্ড

আল্লামা আহমদ শফীর বেফাকের বিপরীতে মাসঊদের নেতৃত্বে আসছে নতুন কওমি বোর্ড

চৌধুরী আকবর হোসেন : ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে নতুন কওমি মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ড। ‘জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ’ নামে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া এই বোর্ডের সভাপতি হিসেবে থাকছেন ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। মহাসচিবের দায়িত্বে থাকছেন রাজধানীর আফতাব নগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদ আলী।

এছাড়া, আল্লামা শফীর নেতৃত্বাধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর অধীনে থাকা একাধিক মাদ্রসাসহ সহস্রাধিক মাদ্রাসাকে নিয়ে বোর্ড গঠনের জন্য হয়েছে একাধিক বৈঠক। আগামী ১৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এই বোর্ডের আত্মপ্রকাশের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে  এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।  

নতুন বোর্ড গঠন প্রসঙ্গে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘বেশকিছু মাদ্রাসা সবসময় আমার সঙ্গে ছিল। আমার নিজের মাদ্রাসাগুলো রয়েছে। আবার আমার ছাত্র বা যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তাদের মাদ্রাসা মিলিয়ে হাজারের ওপরে মাদ্রাসা আছে। তারা মনে করছেন, আমাদের সংগঠিত হওয়া উচিত। বেফাকের দাবি তাদের অধীনে আছে পাঁচ হাজার মাদ্রাসা। দেশে বিশ হাজারের বেশি কওমি মাদ্রসা আছে। বাকি মাদ্রাসাগুলো কোথায় যাবে? সেগুলোকে একত্রিত করার উদ্যোগ এটি। বেফাকের অধীনে থাকা মাদ্রাসাগুলোও আগ্রহী হলে আসতে পারে।’

বোর্ডের আত্মপ্রকাশের নির্দিষ্ট তারিখ না জানালেও অক্টোবর মাসেই সম্ভব হবে বলে জানান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

জানা গেছে, দেশের বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড আল্লামা শফীর নেতৃত্বাধীন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) ছাড়াও একাধিক বোর্ড রয়েছে। এর মধ্যে বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা, ইত্তেহাদুল মাদারিস-চট্টগ্রাম, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ-সিলেট, তানজিমুল মাদারিস-উত্তরবঙ্গ অন্যতম। সম্প্রতি দেশের কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি নিয়ে সরকারে উদ্যোগ বাস্তাবায়িত হলে এই বোর্ডগুলো স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ডের মর্যাদা পাবে।

এছাড়া, ‘কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ আইন পাস হলে এই পাঁচটি বোর্ডের প্রধানরা পদাধিকার বলে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ সদস্য হবেন। এই বোর্ডগুলোর সুপারিশের আলোকে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’-এর চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্য নিয়োগ, পদত্যাগ, অব্যাহতির নীতিমালা নির্ধারণ করার বিধান রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেফাকের এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাস হলে এই পাচটি বোর্ডের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’। কওমি সনদের স্বীকৃতি আদায়, মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাস, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনে ভূমিকা রাখলেও এসব বাস্তবায়নের পর এই বোর্ডগুলো না চাইলে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ কোনও ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবেন না। ফলে একটি বোর্ড গঠন করে সেই বোর্ড বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত করা হলে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবেন। এ কারণেই ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বে নতুন কওমি মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ড গঠন ও সেই বোর্ডটিও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আফতাব নগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদ আলী বলেন, ‘এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে। এখনও কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আগ্রহীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে, আরও হবে। সব কিছু চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।’

তবে দেশের অনেক আলেম বলছেন, নতুন করে দেশে কওমি মাদ্রাসা বোর্ড গঠন জরুরি নয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, ‘পুরনো অনেক বোর্ড আছে। নতুন কোনও বোর্ডের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
১৬ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে