রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০৮:১৮:২৫

‘সজীবরে এখন কে দেখব’

‘সজীবরে এখন কে দেখব’

নিউজ ডেস্ক: একদিনেই সজীবের জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে মাকে না খুঁজে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নানিকে খুঁজতে থাকে সজীব। ‘আমার নানু কই, নানু?’ সজীবের নানি সালেহা বেগম হাসপাতালে নাতির বিছানার পাশে খালি জায়গায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলেন। তাঁকে দেখামাত্র যেন আট বছরের সজীব কিছুটা আশ্বস্ত হলো।

পাশের বিছানার এক নারী কয়েকটি লাল আঙুর ধুয়ে দিয়ে গেলেন। সেগুলো মুখে নেয় না সজীব। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কিছু মুখে দেয়নি শিশুটি। বারবার বাবার কাছে যাব বলে কাঁদছিল।

গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে ‘মানবসেবা’ নামের একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাপা দেয় কয়েকজনকে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন গোলেনুর বেগম, তাঁর সাত বছরের ছেলে সাকিব ও অজ্ঞাতনামা এক ভিক্ষুক। আহত হয় নিহত গোলেনুরের ছয় মাস বয়সী ছেলে আকাশ, সজীব, সজীবের মা আমেনা বেগম, রিকশাচালক বাচ্চু মিয়া ও রমজান আলী। পরে গতকালই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সজীবের মা। তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। আহত রমজান আলী এখনো হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আজ সকালে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সজীবের নানি সালেহা বেগমের সঙ্গে। মেয়েকে হারিয়ে ক্ষণে ক্ষণে কাঁদছেন তিনি। ছোট নাতিকে কীভাবে সুস্থ করবেন, ওকে কে দেখবে—এই ভাবনায় দিশেহারা তিনি। বললেন, ‘মেয়ে হারাইছি। সজীবরে এখন কে দেখব। ওরে কে খাওয়াইবো, না খাইতে পাইরা তো ছেলেটাও মারা যাইব। সজীবের বাবার যে অবস্থা, তারও সুস্থ হতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে।’

আগস্টে এক ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত হন সজীবের বাবা জাকির হোসেন। তিনি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে তাঁকে দেখাশোনা করতেন স্ত্রী আমেনা বেগম। গতকাল সকালে স্বামীর জন্য নাশতা আনতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।

সালেহা বেগমকে নিয়ে বার্ন ইউনিটে গিয়ে কথা হয় জাকির হোসেনের সঙ্গে। জানালেন, ‘এ সময় আমেনার বাসায় বিশ্রাম নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমারে সুস্থ করতে গিয়ে নিজেই চলে গেল।’ এত কষ্টের মাঝেও সালেহা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তিনি। বলতে থাকেন, ‘মা, আমিই আপনের সূর্য্যি (আমেনার ডাকনাম), আপনাকে আর সজীবকে আমি সারা জীবন দেখে রাখব।’

জাকির হোসেন ও সালেহা বেগম কাঁদছিলেন। কাঁদছিলেন তাঁদের আত্মীয়রাও। সবার কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে আসে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতালের কারও নামে নেই। আর এমএলএসএসদের (মেডিকেল সহায়ক) কারও নামে আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছি। থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিচালক আরও জানালেন, সজীবের পায়ের হাড় ভাঙলেও সে এখন শঙ্কামুক্ত। আহত রিকশাচালক রমজান আলীর পাঁজরের ছয়টি হাড় ভেঙে গেছে। ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

গতকালের দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছিল। সেখান থেকে থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আজ স্বজনদের দেওয়া হয়।-প্রথম আলো
১৬ অক্টোবর,২০১৬/ এমটি নিউজ২৪ ডটকম/ আ শি/ এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে