আবদুর রশিদ : আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ বুধবার বিকেলে। তবে এ বৈঠকে যাওয়ার আগে কিছুটা ‘আবেগাপ্লুত’ দলটির নেতারা। কারণ, বর্তমান কমিটির এটাই শেষ বৈঠক হতে পারে। দলের সভানেত্রী এখন পর্যন্ত কাউকেই কমিটিতে থাকার বিষয়ে ‘সিগন্যাল’ না দেওয়ায় ধন্দে আছেন নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত নানা স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব পাওয়া গেছে।
দলটির দুজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আজকের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বর্তমান কমিটির কার্যক্রম মুলতবি করা হবে। নতুন কমিটি ঘোষণার আগে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ডাকা হবে না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা ধরেই নিচ্ছেন, এটাই শেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এই বৈঠককেই অনেক নেতা তাঁর নেত্রীর কাছ থেকে শেষ বিদায় নেবেন।
আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চারজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার রাতে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তাঁরা বলেন, প্রতিটি সম্মেলনের আগেই নেত্রীর সঙ্গে দেখা হলে আশ্বাস দিতেন অথবা না রাখতে পারলে অন্য জায়গায় পদায়ন করবেন বলে সরাসরি বলে দিতেন। তবে এবারই ব্যতিক্রম। তিনি কেবল সম্মেলন কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইছেন। তারা পদ-পদবিতে থাকার বিষয়ে আকার-ইঙ্গিত দিলেও সভানেত্রী কোনো আগ্রহও দেখাচ্ছেন না। উপায়ন্তর না দেখে কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে মন্ত্রিসভায় থাকা আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘সম্মেলনের আগে কে থাকবে বা না থাকবে, প্রতিবারই তার কোনো কোনো ইঙ্গিত থাকে। এবারই ব্যতিক্রম। সভানেত্রী ছাড়া কেউ কিছু জানে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের কার্যনির্বাহী সংসদের শেষ বৈঠক হতে পারে। এ জন্য কিছুটা আবেগ তো কাজ করছেই।’
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, আজকের বৈঠকে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। অর্থাৎ ২০১২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কমিটির সবকিছুর মূল্যায়ন করা হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, পরবর্তী সময়ে ৯৩ দিনের বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন ঠেকানো এবং সর্বোপরি প্রায় সব কটি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করে ২২-২৩ অক্টোবর দলটির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ জন্যই এই কমিটিকে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কমিটি বলছেন দলটির নেতারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, অতীতে দেখা গেছে সম্মেলনের আগে দলের নেতাদের মধ্যে দলাদলির সৃষ্টি হতে। এবারই প্রথম প্রকাশ্যে কোনো দলাদলি নেই। কেউ কোনো পদে প্রার্থী নন। দলের এই ঐক্য শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তাই সবদিক বিবেচনা করলে এ কমিটিই আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কমিটি।
আওয়ামী লীগের এবারের কমিটি কেমন হবে? এ বিষয়ে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভায় বলেছেন, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আগামী দিনের আওয়ামী লীগ পরিচালনার জন্য দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে একটি দক্ষ নেতৃত্ব আসবে। তবে ঠিক কী ধরনের ‘নতুন’ ও ‘দক্ষ’ নেতৃত্ব আসবে, সেটার সদুত্তরের জন্য সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ নেতাদের। প্রথম আলো
১৯ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি