সালমান তারেক শাকিল : গভীর আগ্রহ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। শাসকদলের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে কি ধরনের মৌলিক পরিবর্তন আসে বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে ধাবিত হয়, এ নিয়ে বিএনপির চিন্তা থাকলেও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদটিকে ঘিরে। পাশাপাশি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন নিয়ে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তে আসলে এবং তা বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক ঘটনা হবে-এমন প্রত্যাশা বিএনপির।
শুক্রবার দলটির সিনিয়র কয়েক জন নেতার সঙ্গে আলাপে বিএনপির এ ভাবনার বিষয়ে জানা গেছে।
সম্মেলনকে ঘিরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রচার হওয়ায় বিএনপির আগ্রহ খানিকটা বেড়েছে। ইতোমধ্যে দলটির কোনও কোনও নেতা সম্মেলনের বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুললেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের আশা, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরে পাবে বাংলাদেশ। ফখরুল বলেছেন,‘বিএনপির প্রত্যাশা, আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে।গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বারবার এ দলটিই গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
জানা গেছে, শাসকদলের সম্মেলন নিয়ে দুটি কারণে বিএনপির আগ্রহ আছে। একটি হচ্ছে, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের রাজনৈতিক মেরুকরণ কোন দিকে মোড় নেয়। এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কি ধরনের বার্তা দেয় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দলটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের যুক্ততা কি পরিমাণ হবে, এসব বিষয়ে ভাবনা আছে বিএনপির। দ্বিতীয়ত, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ নাকি ওবায়দুল কাদের, এটি নিয়েই আগ্রহ বেশি দলটির।
বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে সৈয়দ আশরাফের নাম না নিয়েই তার জন্য মতামত দিয়েছেন। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে আমাদের তো মন্তব্য থাকতে পারে না। তবে এমন একজন আসুক বা থাকুক, যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা রাখবেন। এমন ব্যক্তি তো আছেনই।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে সৈয়দ আশরাফ সজ্জন এবং সৎ। একইসঙ্গে পারিবারিকভাবেই নির্মোহ রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে তার। এছাড়া, পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফ উল্লেখযোগ্য।’
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মত দেন সৈয়দ আশরাফের পক্ষে। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে তো সব মহলেই ইতিবাচক মনোভাব আছে।’
বিষয়টি আওয়ামী লীগের একান্তই দলীয় বলে মন্তব্য করতে নারাজ স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ সৈয়দ আশরাফ। বঙ্গবন্ধুর সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবারের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতি আনুগত্য এবং ভালোবাসা বেশি। এই নেতার ভাষ্য, রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিলে সৈয়দ আশরাফ এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচরদের পরিবারগুলোই শেখ হাসিনার বেশি অনুগত। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নেতৃত্বকে একনিষ্ঠ রাখতে সৈয়দ আশরাফের বিকল্প এই মুহূর্তে নেই।
শাসকদলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে নির্বাচন নিয়েই প্রত্যাশা বেশি। নেতারা বলছেন,সম্মেলন হয় গঠনতান্ত্রিক চর্চার কারণে।আর গঠনতন্ত্র মানার কারণেই দলনিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে শাসকদলকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায়। সেদিক থেকে তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করবে বলে বিশ্বাস করি।’
নজরুল ইসলাম খানের ভাষ্য, ‘এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনগুলোয় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা করবে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পেস দেবে, এমন প্রত্যাশা করি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, ‘রাজনৈতিক স্বস্তি ফেরাতে এবং গণতন্ত্র ফেরাতে আওয়ামী লীগের সামনে অপার সুযোগ এবং এ উদ্যোগ ঐতিহাসিক হবে। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হবে রাজনীতি। আর যদি শুধু আলোকসজ্জা, খাওয়া-দাওয়া, গান-বাজনা দিয়ে শেষ করা হয়, তাহলে প্রত্যাশা বিনষ্ট হবে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে, এটাই বড় প্রত্যাশা। ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতেও এর প্রভাব বিস্তার করবে, এই আশাও করছি।’ বাংলা ট্রিবিউন
২১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি