পীর হাবিবুর রহমান : একরাতেই সবাই কাদের ভক্ত। বুধবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে এবারের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলার পরই নেতাকর্মীদের মধ্যে সতস্ফুর্ত উল্লাস শুরু হয়। সরকার ও দলের কর্মীদের মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয়, নিরন্তর মন্ত্রণালয়য়ের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলীয় রাজনীতিতে মাঠ চষে বেড়ানো ওবায়দুল কাদের থেকে যারা
এতোদিন কিছুটা দূরে ছিলেন তারাও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তার পেছনের উপচে পড়া স্রোতে শামিল হন। ওবায়দুল কাদের যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই দলের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাকর্মীতো বটেই এমনকি কাউন্সিলে যোগ দিতে আসা তৃণমূল নেতাকর্মীরাও তার পেছনে ঢল নামাচ্ছেন। কর্মীদের স্রোত বইছে এখন ওবায়দুল কাদেরের দিকে। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি নেতাকর্মীদের সকল আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা ও আনুগত্য রয়েছে।
সেই নেত্রী যখন যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা তার প্রতিই নিঃশর্ত আনুগত্য ও সমর্থন দেখিয়েছেন জানিয়ে দলের অনেকে বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে নেতাকর্মীদের যে ঢল নেমেছে এতা তারই বহিঃপ্রকাশ। অতীতে যারা দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তাদের কারও কারও সঙ্গে মাঠকর্মীদের সম্পর্ক ছিল না কিন্তু শেখ হাসিনার পছন্দই তাদের পছন্দ হয়ে উঠেছে। ওবায়দুল কাদের ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে পথ হেঁটেছেন। ৭৫’র উত্তর কারাবন্দী অবস্থায় ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তিন দফা সরকারের সফল মন্ত্রী হিসেবে কখনো সরকারি কখনো বা দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেশের এমন এলাকা নেই যেখানে বার বার যাননি। দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার হয়ে ছাত্রলীগের অভিভাবকত্ব করায় সারাদেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গেও রয়েছে তার নিবিড় যোগাযোগ।
অনেকেই বলছেন, একদিকে তার প্রতি নেতাকর্মীদের সমর্থন আগেভাগেই ছিল। কারও নীরব কারও বা সরব। বরাবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় এতোটাই উত্তীর্ণ যে শেখ হাসিনার বাইরে দলের অভ্যন্তরে ভুলেও কারও লোক হননি। এমনকি শেখ হাসিনার ইচ্ছার বাইরে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে কখনো প্রার্থী হননি। এবার বারবার বলেছেন তিনি প্রার্থী নন। সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, তিনি যাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেবেন তাকেই সবাই মেনে নেবেন। বুধবার রাতে শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন, বিগত কাউন্সিলে তোমাকে সাধারণ সম্পাদক করতে পারিনি। এবার আমি কথা রাখবো। এই কথা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল থেকে কাউন্সিল উৎসব ঘিরে সক্রিয় নেতাকর্মীদের যারা সেদিনও সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে ছিলেন বা যারা পর্যবেক্ষণ করছিলেন সবাই তার পেছনে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ঢল নামান।
ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা কি বলেছেন জানতে চাইলে বরাবর হেয়ালি করে বলছেন, আকাশে চাঁদ উঠলে দেখা যাবে। তিনি কর্মীদের নিয়ে দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফল করার কাজেই ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ও সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্নের বিষয়াদি নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। ওবায়দুল কাদেরও সার্বিক পরিস্থিতির রিপোর্ট করতে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাত করছেন। ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে দিনভর বৈঠকই করে আসছেন না সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সম্মেলন মঞ্চের তদারকিও করে আসছেন। এমনকি কাউন্সিলরদের কার্ড বিতরণ থেকে তাদের সুবিধা অসুবিধার খোঁজ নিচ্ছেন।
২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গভবনে শপথ নেন সেই দিন বিকেল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদেরের ধানমন্ডির কার্যালয়ে ভিড় করেছিলেন কর্মীসমর্থকরা। বঙ্গভবনের শপথ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের সারিতে তার ঠাই হয়নি। আছরের নামাজ পরে এসে দেখেন অফিস ফাঁকা। সেই কথা তার সব সময় মনে আছে। দলের সুযোগ সন্ধানী, হাইব্রিডদের ব্যাপারে বরাবর তিনি স্পষ্টভাষী হিসেবে সতর্ক করে এসেছেন। অনেকে মনে করেন হাইব্রিডসহ সবার স্রোত তার পেছনে নামলেও দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের পথের সাথীদের তিনি চিনতে ভুল করবেন না। অধীর আগ্রহে এখন তার সমর্থকরা রোববার বিকেলের শেষ অধিবেশনের দিকেই তাকিয়ে আছেন, নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে ওবায়দুল কাদেরের নাম শোনার। - পূর্বপশ্চিম
২১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি