শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:৫১:৩৫

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের নানা দিক

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের নানা দিক

নিউজ ডেস্ক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের দুই দিনব্যাপী আয়োজন আজ শনিবার শুরু। দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার/ এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ এই স্লোগানকে ধারণ করে আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটির এবারের সম্মেলন। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও উৎসুক মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীসহ গোটা দেশে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ।

ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থলে আসতে শুরু করেছেন। তারা সারিবদ্ধভাবে অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের তল্লাশি করা হচ্ছে।

সকাল ১০টা থেকে কাউন্সিল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মো. নাসিম টিএসটি গেট থেকে কাউন্সিল ও ডেলিগেটদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন বলে জানা গেছে।

সম্মেলন স্থলে প্রবেশের জন্য কাউন্সিলরদের জন্য ৪টি গেট নির্ধারিত থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের বেশি প্রবেশ করতে দেখা গেছে রমনা কালিমন্দির ও টিএসটি গেট দিয়ে। সম্মেলন উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে এরই মধ্যে গাড়ি চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এছাড়া পল্টন থেকে শাহবাগ আসার সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই লোকজন বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

এছাড়া সাইনল্যাব মোড় থেকে এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যান চলাচল শনিবার সকাল ৭টা থেকেই বন্ধ। পথচারীদের তল্লামি করে যেতে দেওয়া হচ্ছে সে পথে। মিরপুর-১ ও গাবতলী থেকে আসা বাসা আসাদগেট হয়ে ফার্মগেট যেতে পারছে না। আবার শুক্রাবাদ থেকে পান্থপথ হয়েও কাওরানবাজার বাসে করে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কাওরানবাজার যেতে হলে আসাদগেট থেকে হেঁটে যেতে হবে।

সম্মেলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সম্মেলনের দিন সকাল দশটায় জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর বেলুন এবং কবুতর ওড়ানোর পর মঞ্চে দলীয় সভাপতি আসন গ্রহণ করবেন। এরপর  দলীয় সংগীত-দেশাত্মবোধক সংগীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পর শোক প্রস্তাব ও এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে সভাপতির উদ্ধোধনী ভাষণ। সভাপতির ভাষণের পর সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ শেষে আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের ভাষণ। এরপর মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে প্রত্যেক জেলা থেকে একজন করে কাউন্সিলর বক্তব্য রাখবেন। বক্তব্য চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে রবিবার, প্রথমদিনের পর বাকি থাকা সাংগঠনিক জেলার কাউন্সিলরদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে সারা দেশের কাউন্সিলররা তাদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করবেন। সাধারণত কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন কাউন্সিলরা। এবারের সম্মেলনেও সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। পুনর্নির্বাচিত হলে এ টার্ম নিয়ে তিনি আট বারের মতো সভাপতি হবেন। শেখ হাসিনা টানা ৩৫ বছর ধরে দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের সম্মেলনে ৬ হাজার ৫শ’ ৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। এছাড়া, আরও ৩০ হাজারের মত ডেলিগেট সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। এ কমিশনের সদস্যরা হলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রাশিদুল আলম।

উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে যুগ্ম-মহাসচিব  মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সম্মেলনে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

আওয়ামী লীগের আমন্ত্রণে সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছেন  চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, শ্রীলঙ্কাসহ ১২টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। আগত অতিথিদের হাতে দেওয়া হবে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের তথ্যসম্বলিত ভিডিও সিডি। বিদেশি অতিথিদের বিমান ভাড়া, ৫ তারকা হোটেলে থাকা-খাওয়া সবকিছুর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।

সম্মেলনে যোগ দিতে সারাদেশের কাউন্সিলররা ইতোমধ্যেই রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন। দলের পক্ষ থেকে ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবারের সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।

সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এবার প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি ফেসবুকে প্রচার করা হবে। অতিথিদের সুবিধার্থে ১০টি বড় পর্দায় সম্মেলন দেখানো হবে।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। এই দুদিন শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবনের দিকে এবং জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে শাহবাগের দিকে কোনও গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

এর আগে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সভাপতির পদে পরিবর্তনের কোনও সম্ভাবনা না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।

এদিকে এবারের সম্মেলনে চমক থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তবে কী চমক থাকছে তিনি সেটা খোলাসা করে বলেননি। শুক্রবার রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিদেশি অতিথিদের নৈশভোজে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আগামীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসবে তা আমি আর নেত্রী ছাড়া কেউ জানে না। আর নতুন চমকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন হবে বলেও তিনি জানান।
২২ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে