বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:২০:৩৫

দালাল ধরলে সহজেই মেলে ভারতীয় ভিসা

দালাল ধরলে সহজেই মেলে ভারতীয় ভিসা

এস এম রানা: নিয়ম মেনে চট্টগ্রামে ভিসাকেন্দ্র থেকে ভারতীয় ভিসা পাওয়া যেন ‘সোনার হরিণ’। দালালচক্রের তৎপরতায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মাত্র ৬০০ টাকা ফি দিয়ে ভিসা পাওয়ার কথা। কিন্তু দালালের কারসাজিতে অনলাইনে ভিসার আবেদনের পর সাক্ষাৎকারের ই-টোকেন সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ নির্দিষ্ট দালালের মাধ্যমে আবেদন করে চাহিদা মতো টাকা দিলেই দ্রুত মেলে ই-টোকেন ও ভিসা। তবে দিনদিন বেড়েই চলছে দালালদের সেই চাহিদা। সম্প্রতি কেউ কেউ সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকায় সংগ্রহ করেছেন ভারতীয় ভিসা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রের অ্যাটাচি অফিসার বলেন, ‘প্রতিদিন চট্টগ্রামের ভিসাকেন্দ্র থেকে ৬০০টির বেশি ভিসা সরবরাহ করা হয়।’ ভিসা প্রত্যাশীদের দুর্ভোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমনও হয়েছে, লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তির দুর্ভোগ দেখে তাঁকে দ্রুত ভিসাকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

ই-টোকেন সংগ্রহে দালালচক্রের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে কী হচ্ছে জানি না। তবে ভিসাকেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। বাইরের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের দেখার কথা, ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রের নয়।’

ভারতীয় ভিসা প্রত্যাশীদের ই-টোকেন করে দেওয়া কিংবা দালালের মাধ্যমে ‘কন্ট্রাক্ট’ ভিসা করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, ‘ই-টোকেন কিংবা ‘কন্ট্রাক্ট’ ভিসা করিয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে পুলিশের কাছে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দেননি। তবে পুলিশ বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে। একই সঙ্গে পুলিশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। যা অব্যাহত রয়েছে।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পর্যটন ভিসা প্রত্যাশীদের যাঁরা নগরীর কিছু নির্দিষ্ট কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আবেদন করেন, তাঁরা ই-টোকেন পান সহজে। অবশ্য ওই কাজের জন্য এসব দোকানে তিন হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। যেসব আবেদনকারী নিজেরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে আবেদন করেন, তাঁরা সহজে ই-টোকেন পান না।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিনই নগরীর খুলশী এলাকার হাবিব লেনে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রের ভিসা প্রত্যাশীদের ভিড় লেগে থাকে। চোখে পড়ে লম্বা সারি। কেন্দ্রের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙানো আছে। সেখানে ‘১১ ক্যাটাগরির ভিসার জন্য ই-টোকেন লাগবে না’ বলে উল্লেখ আছে। ওইসব ভিসা প্রত্যাশীরা নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে ভিসার আবেদন করেন।

মেডিক্যাল ভিসা প্রত্যাশী এবং তাঁদের স্বজনদের জন্যও ই-টোকেন লাগে না। আবেদনের পর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে ভিসাকেন্দ্রে হাজির হতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওই লম্বা সারি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন মেডিক্যাল ভিসা প্রত্যাশী ভিসাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন। অন্যদের ফিরতে হয় খালি হাতে। যাঁরা ভিসাকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পান না, মূলত তাঁরাই দালালের মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার চেষ্টা চালান বাধ্য হয়ে।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, শত শত মেডিক্যাল ভিসা প্রত্যাশী ও তাঁদের স্বজন প্রতিদিন ভোরে কিংবা মধ্যরাতের পর লাইনে দাঁড়ান। তবে এতোদিন ভিসাকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পেতেন মাত্র ২০ জন। কয়েকদিন আগে তা বাড়িয়ে ৩০ জনে উন্নীত করা হয়েছে।

জানা গেছে, দালালের মাধ্যমে নেওয়া ভিসাকে ‘কন্ট্রাক্ট’ ভিসা বলা হয়। এ জন্য মোটা অংকের অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া পর্যটন ভিসার ক্ষেত্রে ই-টোকেন সংগ্রহ করে নেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দালালচক্র। এদের সঙ্গে ভিসাকেন্দ্র, ভারতীয় দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে প্রকাশ। এর ফলে ‘কন্ট্রাক্ট’ ভিসা প্রত্যাশীরা ভিসাকেন্দ্রে সহজেই ঢোকার সুযোগ পান।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন জানান, চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রে কথিত ‘কন্ট্রাক্ট’ ভিসা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন বেশ কয়েকজন দালাল। এদের সঙ্গে ভিসার আবেদন করা হয় নগরীর এমন নির্দিষ্ট কিছু কম্পিউটার দোকানের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ আছে। এই যোগাযোগের মাধ্যমে মূলত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কর্মটি সেরে ফেলা হয়। ভিসা প্রত্যাশীরা যখন নিজেরা ভিসা নিতে পারেন না, তখনই দালালচক্রের শরণাপন্ন হন এবং মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেন।

খুলশী ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রের আশপাশের এলাকা, জিইসির মোড়, দোস্ত বিল্ডিং, চকবাজার, আন্দরকিল্লা এবং কোতোয়ালী মোড়ের কিছু কম্পিউটারের দোকানে এ ধরনের ‘কন্ট্রাক’ ভিসার আবেদন করা হয় বলে জানা গেছে। এসব দোকান দালালচক্র নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

আবুল কালাম নামের একজন ভিসা প্রত্যাশী জানান, তিনি অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে ই-টোকেন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হতে হয়েছে তাঁকে। পরে দালালচক্রের কাছে গিয়ে ই-টোকেন পেয়েছেন। বিনিময়ে চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর বাইরে তাঁকে ভিসা ফি বাবদ আরও ৬০০ টাকা বৈধভাবে দিতে হয়েছে।

মেডিক্যাল ভিসা প্রত্যাশীদের একজন নূরুল আবছার বলেন, ‘আমি পর পর তিনদিন লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু ভিসাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারিনি। পরে দালালের মাধ্যমে, কন্ট্রাক্ট ভিসা পেয়েছি বড় অংকের টাকার বিনিময়ে।’-কালের কন্ঠ

১৭ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে