নিউজ ডেস্ক : মোটাসোটা মুরগি দেখলেই আপনি আহ্লাদে আটখানা হয়ে যান। যে করে হোক মুরগিটা আপনার নিতেই হবে। তবে একটু দাঁড়ান, আপনার চিন্তাটা ঝেড়ে ফেলে দিন। আপনি জেনেশুনে কিন্তু বিষ খাচ্ছেন। আপনার শরীরে ঢুকছে আর্সেনিক।
কীভাবে?
ব্রয়লার মুরগি তড়িঘড়ি মোটাসোটা করে তোলা আর সেই মাংসকে আরো বেশি গোলাপি করার জন্য মুরগির খাদ্যে আর্সেনিক মেশানো হয়। এ তথ্য খোদ আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ)।
এ দেশের খাদ্য বিজ্ঞানীরাও তা মেনে নিয়েছেন। আমেরিকার জন হপকিন্স সেন্টারের একটি সমীক্ষা ‘এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পার্সপেক্টিভ’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর মুরগির খাদ্যে যে আর্সেনিক মেশানো হয় তা মেনে নেয় এফডিএ।
এফডিএ বলেছে, ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ মুরগির শরীরে বাইরে থেকে জিন ঢোকানো ছাড়াও আর্সেনিক, হরমোন, কারসিনোজেন্স (ক্যান্সার-সৃষ্টির ক্ষমতা সম্পন্ন পদার্থ) এবং নানা ধরনের ওষুধ ঢোকানো হয়।
যাতে মুরগিগুলো তড়িঘড়ি মোটাসোটা হয়ে ওঠে। এ ধরনের মুরগিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে জিএমসি বা ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড চিকেন’।
মার্কিন সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের মুরগির ওজন এত বেশি হয়ে যায় যে, ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারে না। বেশির ভাগ সময়ই বসে থাকতে দেখা যায়।
ব্রয়লার মুরগি বাঁচে বড়জোর ছয় সপ্তাহ। এ সময়ে তাদের যে খাবার-দাবার দেয়া হয় তাতে মুরগির শরীরে ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট বাসা বাঁধে। এসব মুরগির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। বাজারে অসুস্থ মুরগিই কেটে বিক্রি করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯৫ সালে যেকোনো খাবারে আর্সেনিক মেশানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। জাপান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আরব দেশগুলোও ‘জিএম-চিকেন’ নিষিদ্ধ করেছে।
কিন্তু ভারতে তাতে কিছুই হয়নি। ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ অ্যানিম্যাল অ্যান্ড ফিশারি সায়েন্সের এক বিশেষ সূত্র জানায়, জার্মানির একটি সংস্থা বহু বছর আগে রক্সারসোন যৌগ ব্যবহার করে ওই নাম দিয়েই একটি ওষুধ তৈরি করে।
কিন্তু অনেক পরে দেশে-দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় ওই সংস্থা ওষুধটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তবে মজার কথা হলো, এখনো সেই ওষুধ ভারতের বাজারে পাওয়া যায়। ‘থ্রি-নাইট্রো’ নাম দিয়ে ভদোদরা, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুর কয়েকটি সংস্থা ওই ‘রক্সারসোন’ ওষুধ এখনো বাজারে বিক্রি করছে। পোলট্রিগুলোতে এসব ওষুধের চাহিদা খুব বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্সেনিকের কিন্তু একটা ভালো দিকও আছে। সীমিত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে আর্সেনিক। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে না। ফলে প্রচুর ক্ষতি হয়। অতি মাত্রায় আর্সেনিক মুরগির শরীরে ঢুকলে তড়িঘড়ি মোটা হয় কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই মুরগি খেলে খাদকের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। মুরগির মাংস খেয়ে, প্রয়োজন না থাকলেও শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ঢোকে। ফলে সত্যি সত্যিই যখন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়, তখন আমাদের শরীরে তা আর কাজে আসে না।
প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি নিউট্রিশন বিষয়ের শিক্ষক বরুণ রায়ের কথায়, ভারতে ব্রয়লার মুরগির খাবারে যতটা না আর্সেনিক মেশানো হয়, তার চেয়ে কয়েকশ’ গুণ বেশি মেশানো হয় অ্যান্টিবায়োটিক।
যারা এই মুরগি খান, তাদের জন্য তা মোটেও নিরাপদ নয়। দীর্ঘদিন এই মুরগি খেলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আর কোনো কাজই করতে পারে না। অথচ অ্যান্টিবায়োটিকই শরীর থেকে জীবাণু মেরে ফেলার শেষ উপায়।
ভারতের ফুড-সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটির (এফএসএসএ) কর্মকর্তাদের ব্রয়লার মুরগির বিষয়ে বক্তব্য, ভারতের রাজ্য সরকারগুলো ব্যবস্থা নিলে, তবেই এফএসএসএ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার
১১ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম