গোলাম মাওলা রনি : হাঙ্গেরি সীমান্তে অবস্থানরত মধ্যপ্রাচ্যের একদল শরণার্থীকে উদ্দেশ করে আলজাজিরার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, আপনাদের মধ্যে কেউ কি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন? ২৫ কিংবা ২৬ বছরের এক অনিন্দ্যসুন্দরী সিরীয় যুবতী এগিয়ে এলেন। সাংবাদিক পুনরায় প্রশ্ন করার আগেই তিনি বলতে আরম্ভ করলেন- ইউরোপের লোকেরা আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করছে কেন। আমরা তো ক্ষুধা, দারিদ্র্য কিংবা ভিক্ষার জন্য এ দেশে আসিনি। আমাদের তো সবই আছে- কিন্তু পশ্চিমাদের চক্রান্তে বিশেষত আমেরিকার চক্রান্তে আমরা আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে নিরাপদে থাকতে পারছি না। আমরা এখানে এসেছি নিজেদের অর্থে একটু নিরাপদে বাঁচার জন্য। অথচ ইউরোপীয়রা আমাদের ধরে ধরে এমন সব ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে যেখানকার পরিবেশ কারাগারের চেয়েও নিকৃষ্ট।
মধ্যপ্রাচ্যের অব্যাহত গৃহযুদ্ধ, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আইএস নামক কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনের উত্থান, আল-কায়েদা, মার্কিন ড্রোন, ইউরোপীয় ড্রোন, মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণ প্রভৃতি কারণে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া এবং মিসরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে। মানব জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এ চারটি দেশের সভ্যতার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলের সভ্যতার তুলনাই করা যায় না। তারা যখন অর্থবিত্ত এবং বাদশাহিতে হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতর অবস্থানে ছিল তখন আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝের বিশাল ভূখণ্ডে আদৌ জনবসতি ছিল কি না অথবা থাকলেও তারা কতটা ভয়ঙ্কর এবং নিকৃষ্ট আদিরূপে ছিল, তা আধুনিক ইতিহাস আজ অবধি আমাদের জানাতে পারেনি।
ব্যাবিলনীয়, মিসরীয় এবং আরব সভ্যতার পাদভূমির মুসলমান নামক জাতিটি যে কতটা ভয়াবহ জুলুম, অত্যাচার এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে অমানবিক অবস্থায় উপনীত হয়েছে তা আয়লান নামের একটি অবোধ শিশুর মৃতদেহ তাবৎ দুনিয়াকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিবেক হঠাৎ জেগে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের দশকে মধ্য ইউরোপে যুদ্ধ ও গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত জার্মানি ও সার্বিয়া সর্বপ্রথম সর্বশক্তি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য তাদের দেশের সীমান্ত খুলে দিয়েছে। সমগ্র ইউরোপের শান্তিপ্রিয় মানুষ লাখো কোটি মুখে প্রতিবাদের ধ্বনি তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক দেশটিকে তুলাধোনা করছে। ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড প্রকাশ্যে আমেরিকার সমালোচনা করে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব সমস্যা মার্কিনিদের সৃষ্টি এবং তাদেরই উচিত এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা।
শুধু ডেভিড মিলিব্যান্ডই নন, মুখ খুলেছেন বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রোও। তিনি বলেছেন, সব দোষ আমেরিকার। সুতরাং তাদের উচিত সব শরণার্থীকে মার্কিন মুলুকে আশ্রয় দেওয়া। ভেনেজুয়েলা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে এবং পূর্ব ইউরোপের সাবেক সোভিয়েত বলয়ের বেশির ভাগ দেশ ষাট দশকের মতো মানবতার সপক্ষে পুনরায় এক সুরে মার্কিনবিরোধী কথা বলতে শুরু করেছে। পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়াও চুপ করে বসে নেই। তারাও সিরিয়ায় সৈন্য সমাবেশের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছে। ২৫ বছর ধরে বিশ্বে এককভাবে মোড়লগিরি চালিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্রকে পুতিন সামান্যতম পাত্তা দিচ্ছেন না।
পত্রিকার খবরে দেখলাম, সিরিয়ার আসাদ সরকারকে সব রকম সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য পুতিন সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সেনাদের জন্য গ্যারিসন, বিমানঘাঁটি স্থাপন এবং নিকটতম সাগরে সামরিক রণতরীর টহল বৃদ্ধি করেছেন। পুতিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া, তুরস্ক এবং সাবেক সোভিয়েত বলয়ের অন্যান্য রাষ্ট্র। এই কয়দিন আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চীন তার নিজ দেশে ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক কুচকাওয়াজ আর মহড়া প্রদর্শন করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের স্মরণে ওইদিন তারা ৭০তম ভি ডে বা বিজয় দিবস পালন করে। অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। চীনের এ সামরিক কুচকাওয়াজ এবং সিরিয়ায় রাশিয়ান সৈন্য মোতায়েনের খবরে এমনিতেই মার্কিন প্রশাসনের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার ওপর মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ শরণার্থীর ঢল ইউরোপের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সেখানে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ, যা কি না শেষমেশ মার্কিনিদের স্বার্থ ও প্রভাব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিনিরা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল মূলত জার্মানিকে অবদমিত, অপমানিত এবং লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে চাপে রাখার জন্য। কোল্ড ওয়্যার অর্থাৎ স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে এ বন্ধন একরকম ছিল। কিন্তু আফগানিস্তান, ইরাক-ইরান যুদ্ধ ও ইরাক আক্রমণ নিয়ে পর্দার অন্তরালে মারাত্মক সব অনৈক্য সৃষ্টি হতে থাকে। গত সিকি শতাব্দী ধরে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ, সুশীলসমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের দেশের সরকারগুলোকে প্রবল চাপ দিয়ে আসছিল সব ব্যাপারে মার্কিন নীতি ও সিদ্ধান্তে সমর্থন না জানানোর জন্য। সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে পরিচালিত দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের গদি পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। সে যুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে বর্তমান ব্রিটেনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ফলে বর্তমানের ফ্রান্স ও ব্রিটেন মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে যাওয়াটাই এক ধরনের স্মার্ট সিদ্ধান্ত বলে বিবেচনা করছে।
সাম্প্রতিককালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাখ লাখ শরণার্থী তাদের দেশের সীমাহীন অরাজকতা ও ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য ইউরোপের পথে পাড়ি দিচ্ছে। জার্মান সরকার তড়িৎগতিতে তাদের দেশে শরণার্থীদের আশ্রয়দানের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তাদের দেখাদেখি ফ্রান্সও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ব্রিটেন ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তারাও শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সংগঠন ইইউ ব্রাসেলসে জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক লাখ ষাট হাজার শরণার্থীকে তারা গ্রহণ করবে। অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন বলেছে, দেড় লাখে হবে না। কারণ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কম করে হলেও আট লাখ শরণার্থী ইউরোপে আসবে। এদিকে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া বলেছে, কোনো সমস্যা নেই, প্রয়োজন হলে তারা একাই আট লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার ঘোষণার পর ইতালি আর অস্ট্রেলিয়া একই সুরে কথা বলতে শুরু করেছে।
ওপরের পরিস্থিতিতে যদি ১৯৩৫ সালের ইউরোপের রাজনীতির কথা চিন্তা করেন তবে দেখবেন ইতিহাস কীভাবে একই সুরতে বার বার ফিরে আসে। জার্মানির নতুন অবস্থান এবং ইউরোপীয় নেতাদের আচরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো অপমানবোধ করছে। কারণ সবাই শুধু তাদের দোষারোপ করছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে কেউই তার অতীতকালের মতো তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করছে না। এমনকি জাতিসংঘের মুখপাত্ররাও ভাশুরের নাম আজ অবধি মুখে আনেননি।
কিছু দিন আগে শুনলাম ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন বিরোধ তুঙ্গে। তখন পর্যন্ত ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির কথাবার্তাও শুরু হয়নি। সম্ভবত পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি স্থাপন নিয়ে নেতানিয়াহুর সরকারের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের বিরোধ শুরু হয়ে যায়। সে অবস্থায় ওয়াশিংটন ভ্রমণে গিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে রীতিমতো অপ্রীতিকর বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি এ দুই নেতা পরস্পরের দিকে একবারের জন্য ফিরেও তাকাননি।
এ ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ওবামা প্রশাসন ইসরায়েলের সর্বশেষ নির্বাচনে নেতানিয়াহুর দলের ভরাডুবি ঘটানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। কিন্তু ফল হয় হিতে বিপরীত- অর্থাৎ মার্কিনিদের টেক্কা দিয়ে নেতানিয়াহু পুনরায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হন। এ অবস্থা সামাল দিতে এবং ইসরায়েলকে চাপে রাখার জন্য মার্কিনিরা বলতে গেলে নাকে খত দিয়ে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করে। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে মার্কিনিদের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনিদের বিশ্বস্ত বন্ধু সৌদি আরবও মার্কিন-ইরান পরমাণু চুক্তিতে বেজায় নাখোশ। তারা তাদের আপত্তির কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন আগ্রাসন ও দ্বিমুখী নীতির কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে বলতে গেলে একরকম জোর করেই সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এটা যে দেশটির জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল তা তারা ইতিমধ্যেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। মিসরে মার্কিন তাঁবেদার সিসির অবস্থাও ভালো নয়। সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপ ইরাকি কুর্দি ও তুর্কি কুর্দিদের শত শত কোটি ডলার নগদ অর্থ, আধুনিক মারণাস্ত্র এবং প্রযুক্তি সাহায্য দেওয়ার পরও ওইসব অঞ্চলের মার্কিন তাঁবেদাররা একটুও সুবিধা করতে পারেনি- উল্টো প্রায় প্রতিদিনই তারা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিস্ময়কর উত্থান আর অপরাজেয় অগ্রগতির কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই তাবৎ দুনিয়ার রাজনৈতিক হিসাব উলট পালট করে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে ওবামা ডকট্রিন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ফিদেল কাস্ত্রোসহ অনেক বিশ্বনেতাই এখন বলছেন, আইএস মার্কিনিদের সৃষ্টি। আইএসকে তারা তৈরি করেছে পোড়ামাটি নীতির অনুকরণে। আইএসের কর্মকাণ্ড এবং আইএস ইস্যুতে মার্কিনিদের র্যাট-ক্যাট গেইম সংশ্লিষ্ট সবার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশই মার্কিনিদের আর বিশ্বাস করছে না। বিষয়টি সম্ভবত তাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত করেছে। আর এ কারণে তেলনির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিকে দেউলিয়াত্বের দিকে টেনে নেওয়ার জন্য বিশ্ব তেলের বাজারকে গত ৬০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নামিয়ে আনা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রগুলো অতীতের মতো তাদের মার্কিন প্রভুদের তাঁবেদারি শুরু করে।
জ্বালানি তেল নিয়ে রাজনীতির পরিণাম উল্টো হয়ে গেছে। প্রথমত, তেলের দাম কমায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়া। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাশিয়ার অর্থনীতি আগামী এক বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা যাচ্ছে না। ফলে রাশিয়া কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে তার মিত্রদের সঙ্গে গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো নাক গলাতে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া অন্য কোনো দেশ মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে না। অন্যদিকে, তেলসম্পদে সমৃদ্ধ ওই চারটি দেশ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরোধিতা যে করবে না, তেমনি আভাস ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ইরান নতুন আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য নীতি যেমন মার্কিনিদের ভাবিয়ে তুলেছে তেমনি ইরানের অগ্রযাত্রা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন তাঁবেদার ও সুনি্ন গোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ইরান প্রায় ধারাবাহিকভাবে তিন হাজার বছর ধরে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং গ্রিসের বিরাট অংশের ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বজায় রেখেছিল। পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর ইরানের মতো সুদীর্ঘকালের সাম্রাজ্য পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য নেই। ফলে অতীতের ধারাবাহিকতায় ইরান বেশ হিসাব কষেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান সংহত করছে।
চতুর্থমুখী সমস্যা, পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা দুনিয়ার মুসলমানদের অব্যাহত ঘৃণা ও অসহযোগিতার কারণে মার্কিন নীতি দেশে-বিদেশে সর্বত্র মার খাচ্ছে। ঠিক এমনতর পরিস্থিতিতে তারা সিরিয়া, ইরাক এবং লিবিয়ায় ওবামা ডকট্রিন বাস্তবায়নের জন্য সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। ফলে চারদিকের পোড়ামাটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ওই অঞ্চলের ভূখণ্ড বারুদের গন্ধে এতটাই রক্তপিপাসু হয়ে পড়েছে যে, মানুষ তো দূরের কথা বনের পশুপাখিও সেখানে থাকতে পারছে না। ফলে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ, সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ এবং নিষ্ঠুর অমানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
মানুষ তার প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তার মাতৃভূমি আর নিজ হাতে গড়া আবাসভূমিকে। সেই মানুষ যখন নিজ দেশ ছেড়ে পরদেশে আশ্রয়ের খোঁজে শরণার্থী হয় তখন আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে- কেবল কাঁপে না সাম্রাজ্যবাদী মন এবং তাদের দোসরদের কুরসি।-বিডিপ্রতিদিন
লেখক : কলামিস্ট
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে