নিউজ ডেস্ক : শুধু নির্বাচন আয়োজন করেই একটি রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জরুরি। ১৫ই সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের দুই বিশেষজ্ঞ আলফ্রেড দে জায়াস ও মাইনা কিয়াই। তারা আরও বলেছেন, দমনমূলক নীতির কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশে গণতন্ত্র অব্যাহতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা এ পরিস্থিতির নিন্দা জানিয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর প্রতি গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়, ওএইচসিএইচআর এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ বার্তা দেন ‘গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক নিয়ম শৃঙ্খলা প্রচারণা’ বিষয়ক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ আলফ্রেড দে জায়াস এবং ‘শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা’ বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের মাইনা কিয়াই। গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন দেশে দমননীতি ছাড়াও জনগণের ইচ্ছাকে আমলে না নিয়ে কতিপয় অংশের প্রভাব বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন তারা। এ বছর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য হলো নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা।
জাতিসংঘের এ দুই বিশেষজ্ঞ বলেন, গণতন্ত্র এখন অতিরিক্ত ব্যবহৃত এক শব্দে পরিণত হয়েছে। এমনটি স্বৈরশাসকরাও গণতন্ত্রের কথা বলছেন। শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজন করেই একটি রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয়ে যায় না। নির্বাচনগুলোর মাঝখানের সময়ে কি ঘটছে তা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কি কথা বলতে পারছে কি না? তারা যাদের নির্বাচিত করেছে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে কি না? তাদের প্রভাবিত করতে পারছে কি না?
মানুষের প্রয়োজন, ইচ্ছা আর তাদের ওপর প্রভাব রাখে এমন নীতির মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কি না? দুঃখ দুর্দশার কথা প্রকাশ করার অন্য সব উপায় ব্যর্থ হওয়ার পর মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারছে কি না? শান্তিপূর্ণ ভিন্নমত পোষণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে কি না এবং অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে কি না যেন একটি গ্রুপের দ্বারা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার না হয়। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, এগুলো হওয়ার জন্য নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। এটা নিঃসন্দেহে সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে আমরা সকল রাষ্ট্রের প্রতি এটা উপলব্ধি করার আহ্বান জানাই। দুঃখজনকভাবে বর্তমানে নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা দ্রুত সঙ্কুচিত হচ্ছে। আপাত গণতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রের ঐতিহ্য নেই- দুই ধরনের রাষ্ট্রেই এ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। নির্বাচিত কর্মকর্তা আর জনগণের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক বৈধতা নেই এমন কতিপয় গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের ফলে গণতন্ত্র ক্ষয় হওয়ার উদ্বেগজনক ঘটনাপ্রবাহ আমরা লক্ষ্য করেছি। গণতান্ত্রিক সুশাসন তাদের দ্বারা দুর্নীতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে না। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, সুশাসনে প্রকৃত অংশগ্রহণের দাবি জানানোর মাধ্যমে সুশীল সমাজকে তাদের প্রাপ্য স্থান পুনরুদ্ধার করতে হবে। গণতন্ত্র শুধু একটি মোড়ক নয়। গণতন্ত্রকে একটা অন্তসারশূন্য শব্দে পরিণত হতে দেয়া উচিত নয়। এটা পদক্ষেপ গ্রহণের দৃঢ় আত্মসংকল্প।
এটা অধিকতর শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে একটি প্রয়োজনীয় মাধ্যম। আর মহৎ এ লক্ষ্য অর্জনে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ কারণে আমরা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নাগরিক সমাজের জন্য অধিকতরা স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাই যেন তারা গণতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী হিসেবে তাদের ন্যায্য অবস্থান নিতে পারেন।-এমজমিন
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে