শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:২০:১৮

তাঁকিয়ে দেখল সবাই, পাশে দাঁড়াল একজন

তাঁকিয়ে দেখল সবাই, পাশে দাঁড়াল একজন

সাঈদা ইসলাম : ফুটপাতে জন্ম নেওয়া ফুটফুটে এক শিশু পেয়েছে পরিবার, ‘নতুন’ মায়ের নিরাপদ কোল। ৪ সেপ্টেম্বর ভরদুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাদামতলী এলাকার ফুটপাতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মা তাকে জন্ম দেন। জন্মের পরপরই মানুষের ভালো-মন্দ দুটোই দেখেছে সে।

শিশুটির জন্মমুহূর্তে ফুটপাতে অসংখ্য মানুষ জটলা পাকালেও প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা সেই মায়ের সেবায় এগিয়ে আসেনি কেউ। মানুষের ভিড় দেখে দূর থেকে ছুটে আসেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার এএসআই পল্টু বড়ুয়া।


শিশুটির কাহিনি শোনালেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা, ওই দিন আমার আগ্রাবাদ এলাকায় ডিউটি ছিল। রাস্তার পাশে মানুষের জটলা দেখে সেখানে যাই। ভিড় ঠেলে দেখি, প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন এক নারী। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে। আমি কী করব বুঝে ওঠার আগেই শিশুটির জন্ম হয়। কিন্তু খেয়াল করলাম, শিশুটি কাঁদছে না, মায়ের অবস্থাও ভালো মনে হচ্ছিল না। দ্রুত একটি অটোরিকশা ডেকে আনি। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই।

পল্টু বড়ুয়া বলেন, মা ও শিশুর অভিভাবক না থাকায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা ভর্তি করতে ইতস্তত করছিলেন। পরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে পুরো ঘটনা জানাই। এরপর পরিচালক ভর্তির নির্দেশ দেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠায় পরদিনই মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক নুরুল হক বলেন, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে সদ্যোজাত শিশু ও মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য পল্টু বড়ুয়া অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। হাসপাতালের পক্ষে মা ও শিশুর চিকিৎসায় যতটা সম্ভব সহায়তা করা হয়েছে। শিশু ও মা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠায় তাদের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয়নি।

হাসপাতাল থেকে এই পুলিশ কর্মকর্তা নিজের বাসায় নিয়ে আসেন মা ও শিশুকে। তাঁর এক আত্মীয় শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে কোথায় রাখবেন! শিশুটির মা বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধীও। জোর করেও তাঁকে বাসায় রাখা যাচ্ছিল না। পরে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম তালুকদারের সঙ্গে পরামর্শ করে দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারের নিচে বালিশ ও মাদুর দিয়ে মায়ের থাকার ব্যবস্থা করেন। তাঁর বাসা থেকে তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থাও করেন।

ওসি নুরুল আলম তালুকদার বলেন, শিশুটির জন্মদাত্রী মায়ের বিষয়ে তাঁদের খুব বেশি কিছু করার নেই। মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে হওয়ায় কোথাও তিনি বেশিক্ষণ থাকতে চান না।

পল্টু বড়ুয়া বলেন, এত সুন্দর বাচ্চা। একদিনেই মায়া পড়ে গেল। কোনো আশ্রয়কেন্দ্রেও পাঠাতে মন চাইল না। কিন্তু আমার নিজের তিনটি বাচ্চা। সংসারে মাও রয়েছেন। তাই থানার ওসির সঙ্গে আলোচনা করে শিশুটিকে আমার এক আত্মীয়ের কাছে দিয়েছি। যে দম্পতি শিশুটির দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা নিঃসন্তান।

গত বৃহস্পতিবার ডবলমুরিং থানা পুলিশ কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা গেল সেই শিশুটি মায়ের কোলে পরম আদরে খেলছে। ১৪ বছর ধরে এমন একটি শিশুর আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন সেই দম্পতি। শিশুটিকে কোলে নিতে পেরে মায়ের এখন মুখভরা হাসি। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুটির নাম রেখেছেন আঁখি চৌধুরী। তিনি বললেন, আঁখির জন্য সবাই দোয়া করবেন। ওকে মানুষের মতো মানুষ করব।-প্রথমআলো
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে