নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারে সহায়-সম্পদসহ বাড়িঘরের মায়া ত্যাগ করে ছুটে আসছেন বাংলাদেশে, খুঁজে ফিরছেন একটু আশ্রয়। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে এমনই হাজারো অসহায় দরিদ্র মানুষ। যাদের মুখে শুধু মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা। সবার চোখে মুখে হতাশার ছাপ, একটু আশ্রয় আর বেঁচে থাকার আকুতি।
গত শনিবার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে গিয়ে কথা হয় মিয়ানমারের খেয়ারীপাড়া গ্রাম থেকে বোনকে নিয়ে পালিয়ে আসা শত বছরের বৃদ্ধ আবদুল খালেকের সঙ্গে। তিনি নিজেই জানালেন, তার বয়স ১০০ পেরিয়েছে। কিন্তু ১০০ বছরের জীবনে তিনি মিয়ানমারে এমন ভয়াবহতা দেখেননি কোনো দিন। ৩ ছেলে, ২ মেয়ে, ছেলের বউ নাতিনাতনিসহ ১৫ জনকে হারিয়ে আবদুল খালেক এখন অসহায় নির্বাক।
বললেন, ভালোয় চলছিল তাদের সংসার, মিয়ানমারে দালান বাড়ি ছিল, ছেলেদের ব্যবসাবাণিজ্য ছিল, ভালো আয় ছিল। কিন্তু সবকিছু নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে সন্তানদের, ছেলের বউদের নির্যাতনের পর কাউকে আগুনে নিক্ষেপ আর কাউকে গুলি করে হত্যা করা হয়। শিশুদের নিক্ষেপ করা হয় আগুনে।
বৃদ্ধ বলে হয়তো আমাকে ছেড়ে দিয়েছে সেনাসদস্যরা। পরে গত সপ্তাহে বোন মাহমুদা খাতুনের সহয়তায় এক দালালের মাধ্যমে তিনি রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রবেশ করেছেন বলে জানান। এ বৃদ্ধের মতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলছে প্রকাশ্যে গণহত্যা। তার জীবনে এমন বর্বরতা তিনি দেখেননি। বিভীষিকায়ময় পরিস্থিতি চলছে সেখানে। শুধু আমার পরিবার নয়, প্রকাশ্যে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে মুসলিম রোহিঙ্গাদের জবাই করে হত্যা করছে জালিম বাহিনী।
বিভিন্ন বয়সী নারীদের পাশবিক নির্যাতন ছাড়াও ঘরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের আটকে রেখে বাইরে থেকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়া হচ্ছে। অসহায় মানুষকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করছে। বাড়িঘরে আগুন দেয়ার আগে মালামাল লুট করা হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চলছে লুটপাট। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে এ রকম শত শত অসহায় রোহিঙ্গার নির্যাতনের বর্ণনা এখন বস্তির গলিতে গলিতে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আশ্রয় গ্রহণকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে রোহিঙ্গা বস্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর জানান, মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর দিন দিন হত্যা-নির্যাতন বেড়েই চলছে। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে, কেউ জীবন রক্ষার তাগিদে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে এখানে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন বলে তিনি জানান। নতুন করে যারা আসছেন আগে থেকে অবস্থানকারীরা তাদের ঘরে আশ্রয় দিচ্ছেন।
বস্তিরর ছোট ছোট একেকটি রুমে ১০-১২ জন করে কোনোমতে মাথা গুজে আছেন তারা। এমনিতেই আগে থেকে যেসব রোহিঙ্গা এ বস্তিতে আছেন তারা একবেলা খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন। তার ওপর প্রতিদিনই বাড়ছে নতুনদের বোঝা। নুর মোহাম্মদ জানান, তাদের বস্তিতে আশ্রয় নেয়া নারীদের মধ্যে অন্তত ২শ’ জনের অধিক মিয়ানমারে নারীরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে তাকে অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়া বেশ কয়েকজন বস্তিতে রয়েছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন। এমজমিন
৭ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি