শরীফ মজুমদার : চারদিকে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ে থেকেই এডিস মশারা দুই বেলা দুই চুমুক রক্তের জন্য প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে এর-ওর শরীরে! এমনকি এদের বেয়াড়াপনা থেকে রক্ষা পাননি জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিও! আমরা জানি, চিকিৎসা শেষে ও মানুষের শুভকামনায় মাশরাফি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। তখন পাত্তাই পাবে না কোনো এডিস মশা। তবে অনেক পচা মানুষ এতে আঙুল তুলছে কর্তৃপক্ষের দিকে। অথচ, কর্তৃপক্ষ কিন্তু ‘ধোয়া তুলসী পাতা’! তাদের এতে কোনোই দোষ নেই। কীভাবে? চলুন দেখা যাক।
* কথায় আছে, কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন। যাদের কপালে ডেঙ্গু আছে, আজ হোক, কাল হোক তাদের এডিস মশা কামড়াবেই। এতে শুধু শুধু কর্তৃপক্ষের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাদের কপালে তো আর কর্তৃপক্ষ খসখস করে লিখে দেয়নি যে অমুক দিন, অমুক জায়গায়, তমুক সময়ে তাদের এডিস মশা কামড়াবে। ঠিক কি না?
* কবি বলেছেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ চিন্তা করুন তো, কত বড় একটা কথা! নিতান্ত অসহায়, গোবেচারা টাইপের ছোট্ট কিউট একটা জীব এডিস মশা। এখন কর্তৃপক্ষ যদি এই জীবটার সঙ্গে ‘প্রেম বন্ধনে’ আবদ্ধ না হয়ে নির্দয়ের মতো তাদের নিধন শুরু করে, তাহলে তো মহা পাপ হয়! জেনেশুনে এমন অন্যায় কাজ কি তারা করতে পারে?
* অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার একা মানুষের থাকবে, আর বাদবাকি জীব আশ্রয়হীন হয়ে উপোস করবে—একটি গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় এটা মেনে নেওয়া যায় না! কাজেই মশাদের তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে অন্ন ও বাসস্থানের অধিকার হরণ করা নির্মমতা ছাড়া আর কিছুই নয়! তাই কর্তৃপক্ষ নগরের অন্যান্য নাগরিকের মতো মশাদের জন্যও টেকসই বাসস্থান এবং দুই বেলা দুই চুমুক রক্তের ব্যবস্থা করতে বদ্ধপরিকর! এতে কেউ কর্তৃপক্ষের দোষ দিলে সে নির্ঘাত দয়ামায়াহীন মানুষ!
* নগরের হাজার রকমের উন্নয়নমূলক কাজে কর্তৃপক্ষ ব্যাপক ব্যস্ত। আর এই যে এত উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, সেটা জানার অধিকার অবশ্যই মানুষের আছে! নিজেরা একটা উন্নয়নকাজ চুপিচুপি করে ফেলবে আর জনগণ তা জানবে না—এটা কেমন কথা! তাই তো নাগরিকদের সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষ উন্নয়নকাজের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত নগরের মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন বিলবোর্ডে লিখে দিচ্ছে। তা ছাড়া মশা নিধন একে তো ‘জীব হত্যা’, তার ওপর এতে না অর্জিত হবে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা, না বাড়বে জিডিপি, না বাড়বে বিলবোর্ডের সৌন্দর্য! এ রকম একটা অর্থহীন কাজে জান-মাল-সময়ের অপচয় না করায় কর্তৃপক্ষ বরং বাহবা পেতে পারে, কোনোভাবেই দায় নয়!
* মাশরাফির জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। মানুষ যেমন তাঁকে চেনে তেমনি অন্যান্য জীবের মাঝেও রয়েছে তাঁর বিশাল জনপ্রিয়তা। যে বেয়াড়া মশাটা তাঁকে হুল ফুটিয়েছে, সে আসলে মাশরাফির বিরাট ফ্যান! এত বড় একজন তারকাকে চোখের সামনে পেয়ে বেচারার হুঁশ ছিল না। তাই তো মশক সমাজে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার জন্য সে মাশরাফির রক্তের স্যাম্পল নিয়ে গেছে! একজন ভক্তের এমন ‘পাগলামি’তে বাদ সাধবে, এতটা অমানবিক কর্তৃপক্ষ নয়। যদি এতে কেউ কর্তৃপক্ষকে বিন্দুমাত্র দোষ দেয়, তবে সে এত্তগুলা পচা!-প্রথমআলো
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে