মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৩৭:২১

বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ এপিজির

বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ এপিজির

শাহনেওয়াজ : সরকারের বাণিজ্য সংস্থার অফিসে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে ‘গুনে গুনে ঘুষ খাওয়ার’ তথ্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং প্রতিনিধি দল। একই সঙ্গে তারা হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকের অর্থ লোপাটের খবর জেনে দুর্নীতির পরিমাপ সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রতিনিধিদল জঙ্গি অর্থায়ন ও অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশের পদক্ষেপ জানতে সম্প্রতি ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেছে। বৈঠকে তারা বাংলাদেশে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

তাদের ধারণা, বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন বিষয়টি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কোকোর পাচার করা অর্থসহ আরো কিছু অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তারা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে কি পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে সে ব্যাপারে প্রতিনিধি দলের জানার আগ্রহ রয়েছে। একই সঙ্গে পাচার করা অর্থ কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে সে বিষয়টি জানতে চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে। জঙ্গি অর্থায়নে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের মামলা হয়েছে কি না তা জানার আগ্রহ রয়েছে প্রতিনিধিদলের।

তবে এ ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী দুদকের সচিব মাকসুদুল হাসান খান জানান, আমাদের কাছে তারা অনেক বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদের প্রশ্নের সব উত্তর দিতে হয়েছে। আমাদের প্রশ্নের জবাবে তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট।

এদিকে আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুদকের আবার বৈঠক হতে যাচ্ছে। বৈঠকে দুর্নীতি দমন কমিশন কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। বিশেষ করে আলোচিত বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারি নিয়ে যে মামলা হয়েছে সে মামলায় কতজন আসামি তার একটি তালিকাও চাইবে তারা।

এমনকি, তালিকা থেকে কাউকে বাদ দেয়া হয়েছে কি-না সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে তারা প্রশ্ন তুলেছে। তবে অর্থ পাচারের বিষয়টি আজ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে। অর্থ পাঁচারের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা হয়েছে, এ মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কেও জানার আগ্রহ রয়েছে তাদের। ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র কোকোর পাচার করা ২১ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার বিষয়টি প্রতিনিধি দল জানতে পেরে দুদকের কার্যক্রমে বেশ কিছুটা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কার্যক্রম কি পর্যায়ে তার একটি খতিয়ান জানার আগ্রহ প্রতিনিধি দলের।

জানা গেছে, প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ইমেজ। ২০১৪ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের প্ল্যানারি সভায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নকারী দেশের ‘ধূসর’ তালিকা বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেয়া হলে, বাংলাদেশ আবারো ধূসর তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। যে কারণে এবার সফররত প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং বিষয়টি বেশ গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে সরকার ইতিমধ্যে মানিলন্ডারিং আইন আরো সংশোধনের মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বিষয়টি প্রতিনিধি দল অবহিত হওয়ার পর সন্তোষ প্রকাশ করলেও, দুদুকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম আরো জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের ভিত্তিতে একটি খসড়া রিপোর্ট দিতে পারে। একই সঙ্গে সম্মিলিতভাবে আগামী ২২ অক্টোবরের আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বড় ধরনের বৈঠক করতে পারে। যে বৈঠকে প্রতিনিধি দল তাদের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরবে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের করণীয় বিষয়গুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে দেবে।

এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, তারা যে প্রতিবেদন তৈরি করবে তা আগামী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় এপিজির বার্ষিক সভায় উপস্থাপন করবে। আর এ প্রতিবেদন ভালোভাবে গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ একটি ভালো অবস্থানে চলে আসবে, যা দাতা সংস্থার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। আগামী বছর এপিজির বার্ষিক সভাটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত এপিজি প্রতিনিধি দল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করবে। প্রতিটি বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন।-মানবকণ্ঠ
১৩ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে