সোমবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০১৭, ০৪:৩৫:২৬

জামায়াতমুক্ত করে মূলধারায় ইসলামী ব্যাংক

জামায়াতমুক্ত করে মূলধারায় ইসলামী ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংক ছিল জামায়াতের প্রধান অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। জামায়াতের কোনো নেতার সুপারিশ ছাড়া এ ব্যাংক থেকে কাউকে ঋণ দেওয়া হতো না। কোনো ব্যক্তি ঋণ নিতে চাইলে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগত শুধু যাচাই-বাছাই করতে, ঋণের আবেদনকারী জামায়াতের লোক কিনা। এমনকি সে ব্যাংকে কারও চাকরিও হতো না জামায়াতের সুপারিশ ছাড়া।

শতভাগ জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের চাকরি দেওয়া হতো ইসলামী ব্যাংকে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমও এক সময় সুপারিশ করতেন এই ব্যাংকে চাকরির জন্য। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত টানা তিন মাস সরকারবিরোধী যে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছিল, সেই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অর্থায়নও করা হয় ইসলামী ব্যাংক থেকে।

দীর্ঘদিন পর সরকার ইসলামী  ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করেছে। এটাকে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। আর এই ব্যাংকের একজন গ্রাহকও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করেছে সরকার। এটা শেখ হাসিনা সরকারের ঐতিহাসিক সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে এখন ব্যাংকটির গত ১৫-২০ বছরের আয় ও ব্যয়ের অডিট হতে হবে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়েও অডিট করানো যেতে পারে।

যার মাধ্যমে হয় তো বেরিয়ে আসবে তারা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কীভাবে জঙ্গি অর্থায়ন করেছে। কেননা ইসলামী ব্যাংক জঙ্গি অর্থায়ন করেছে বা জামায়াতকে সরাসরি অর্থায়ন করেছে— এমন তথ্য পেতে হলে অডিট করাতে হবে। এমনকি তারা বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকে এলসি খোলে ওভারইনভয়েস করেছে কিনা-সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য একটা নিরপেক্ষ অডিট করা খুব জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক জিনাত হুদা গতকাল বলেন, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে বহুদিন ধরে আমাদের একটা আন্দোলন চলছিল, সেটার প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করা হয়েছে। তারা যে ১৯৭১ সালে নানাবিধ অপকর্ম করেছিল সেগুলো ঢেকে ফেলতে চেয়েছিল টাকার জালে। এ জন্য তারা খোদ মুক্তিযোদ্ধাদেরও সহযোগিতা করত ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে।

ব্যাংকটিকে জামায়াতমুক্ত করায় বা মালিকানা পরিবর্তন করায় বিদেশি বিনিয়োগে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না মালিকানা পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে। বরং বিশ্বব্যাপী মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তা আরও বেগবান হবে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ইসলামী ভাবধারায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা। কোরআন সুন্নাহর আলোকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তিনি আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রথমেই ইসলামী ব্যাংককে জামায়াত বা মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদমুক্ত করা হয়েছে। এখন জনগণের অর্থের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ব্যাংকের টাকা হচ্ছে জনগণের টাকা। এখানে যেন একজন গ্রাহকও ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে নজর রাখতে হবে। আর পর্ষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য এবং দক্ষ লোকদেরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে তিনি মনে করেন।

প্রায় ৩৩ বছর পর বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি এই উদ্যোগকে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদসহ প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, সরকারের এমন সাহসী উদ্যোগের কারণে কোনো রাজনৈতিক দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হলো ইসলামী ব্যাংক। এতে ঝুঁকিমুক্ত হলো দেশের অন্যতম আর্থিক খাত। আর স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর দেশের ব্যাংকিং খাতে এই ধরনের পরিবর্তনের ঘটনা এটিই প্রথম।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে দেশের কোনো ব্যাংক থাকবে এটি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সরকার দেশের স্বার্থেই এটাকে জামায়াতের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকে কর্মরতদের ৯৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাকগ্রাউন্ড হলো জামায়াত-শিবির। গত বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে লাভ করেছে এই ব্যাংকটি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী মারাত্মক সহিংসতা, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, রাস্তাঘাট অবরোধ করে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছিল তার জন্য জামায়াত-শিবিরকেই বেশি দায়ী করা হয়। এর জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তার জোগানদাতা বা উৎস কী সে নিয়েও দেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। কারও কারও মনে সন্দেহ রয়েছে, এই ব্যাংকের লাভের টাকায় দেশের জনগণের সম্পদ নষ্টের তৎপরতা চালিয়েছেন এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, আবু নাসের মো. আবদুস জাহের ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৩ সালে পরবর্তী দুই বছরের জন্য। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সদস্য। বর্তমান সরকার যখন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে তখন তিনি দেশত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন মুস্তফা আনোয়ার, যিনি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি। মুস্তফা আনোয়ারকে সরিয়ে গত বৃহস্পতিবারের বোর্ড সভায় নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে। এই বোর্ডে নির্বাহী কমিটির প্রধান করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল মতিনকে।

গত ৩৩ বছর ধরে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এই ব্যাংকটি একচেটিয়াভাবেই ব্যাংকিং খাতে ব্যবসা করে আসছিল। একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকটি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যে ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছিল তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা রয়েছে। একক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের লাভের টাকা দেশবিরোধী ভূমিকায় বিশেষ করে জঙ্গিদের অর্থায়নে ব্যবহূত হচ্ছিল কিনা তা নিয়েও অনেক তদন্ত চলছে। এরকম পটভূমিতে সরকারের তরফ থেকে ইসলামী ব্যাংককে জামায়াতমুক্ত করার জন্য ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে সরকারের বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন লোকজনদের ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের দেশবিরোধী নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এই ব্যাংকটির মাধ্যমে পরিচালিত না হয়।

ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ করা এই ওয়েবসাইটে ব্যাংকটির ৩১৮টি শাখার কথা উল্লেখ আছে। ৩৩ হাজার ৬৪৬ জন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন যার মধ্যে ৬৩ শতাংশই হলো বিদেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, সরকারের পলিসির অংশ হিসেবেই ইসলামী ব্যাংকে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। জেনেবুঝে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য ব্যাংকটিতে এ ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক আদর্শ বিস্তারের যে কৌশল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে করা হতো সেটি তার বিদেশি মালিক বা পরিচালকরাও জানতেন না। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই বিদেশি মালিকরা জামায়াতের এই ধরনের মনোভাব জানার পর নিজ থেকেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল মকসুদ বলেন, ‘আপাতত একটি ভালো কাজ হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠুভাবে ব্যাংকটির স্বার্থ রক্ষা করে পরিচালনা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত। প্রায় ছোটখাটো ৩-৪টি ব্যাংকের সমান হবে ইসলামী ব্যাংকের আকার। ’

দেশের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ব্যাংকের মালিকানা দেওয়া হলেও পুরো ব্যাংকের একক নিয়ন্ত্রণ নেই আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলেরও, যারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বা আছেন।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ‘ইসলামের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে রাজনীতির কাজে লাগিয়েছেন জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ইসলামী ব্যাংকের পরিচালকরা। সরকার নিয়মনীতি মেনে আইনসিদ্ধভাবেই এর মালিকানায় পরিবর্তন এনেছে দেশের স্বার্থে। আমি মনে করি এটি সঠিক কাজ এবং আমাদের প্রত্যাশাও ছিল এরকম। কারণ ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তারা সবাই জামায়াত কানেকশনের। জঙ্গি অর্থায়নের কথাও আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত হয়েছিল ব্যাংকটির বিরুদ্ধে।

শুদ্ধি অভিযান চালাবে নতুন পরিচালন পর্ষদ : ইসলামী ব্যাংকে শুদ্ধি অভিযান করবে নতুন পরিচালনা পর্ষদ। বার্ষিক মুনাফা, সিএসআর খাতের অর্থায়ন কোথায় কীভাবে হয়েছে সেগুলো কঠোরভাবে নিরীক্ষা পরিদর্শন করা হবে। এতে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম বা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করার প্রমাণ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের নামে ধর্মকে বেচাকেনা করা হয়েছে বলে পর্ষদ মনে করছে। এ প্রক্রিয়া থেকে বের করে একটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে নতুন পর্ষদের কাজ। গতকাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ এক সংবাদ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা জানায়। এদিকে ইসলামী ব্যাংকে পরিবর্তনের পর এর গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে।

রাজধানীর মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ব্যবসার দিক দিয়ে ইসলামী ব্যাংক এক নম্বর ব্যাংক। গত বছর ব্যাংকটি ২ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার প্রায় ৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ৫ লাখের বেশি মহিলা উদ্যোক্তাকে এই ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের শিল্প খাতে যে কোনো বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাংকের প্রতি যে আস্থা গ্রাহকদের ছিল সেটা অটুট থাকবে। এই ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা আছে সেটা মুনাফাসহ সব আর্থিক কার্যক্রমে প্রমাণ পাওয়া যায়। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক। এমনকি আমাদের রেমিট্যান্স আহরণেরও শীর্ষে।

তিনি বলেন, এত দিন ইসলামী ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হয়েছে। একটি বিশেষ দলের পরিচিত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মুনাফা, সিএসআর ফান্ডের অর্থায়ন নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ আছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে আমাদের প্রথম কাজ। বিশেষ করে সিএসআর ফান্ডের অর্থায়ন নিয়ে নানা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। গত বছর ব্যাংকটি ৮২ কোটি টাকার বেশি সিএসআর ফান্ডে ব্যয় করেছে। এই অর্থ কোথায় গেছে, কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে সেটা নিরীক্ষা করা হবে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম বা প্রশ্নবিদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানে ব্যয় করা হলে তার বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব।

সাবেক সচিব আরাস্তু খান বলেন, ব্যাংকের প্রায় ১৪ হাজার দক্ষ লোকবল রয়েছে। যাদের কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। তবে আমাদের নিরীক্ষায় বা কোনো কর্মকর্তা যদি রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করেন সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। একজন ব্যাংকারের যে আচরণ তা রক্ষা করতে হবে। এতে কোনো ধরনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইসলামী ব্যাংকে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এখানে কোনো উদ্দেশ্য নেই। শুধু ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে পরিবর্তন এসেছে। আগে এই ব্যাংক রাজনৈতিক লেবাসি ইসলামী ব্যাংকিং করত। ইসলামকে বেচাকেনা করার একটি প্রবণতা ছিল। আমরা সেখান থেকে বের হয়ে শরিয়াহভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলব।

ইসলামী ব্যাংক কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের দখলে যাচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে যাচ্ছে না। ব্যাংকের নতুন পর্ষদ নির্বাচন হয়েছে আর এমডি নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন। পরে ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহবুব উল আলম। এ ছাড়া ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে একটি দল ও জেলার প্রভাব ছিল। তা থেকে বের হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি মনোভাব পোষণ না করে নারী, পুরুষ সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এদিকে ইসলামী ব্যাংকে হঠাৎ করে পরিবর্তনে ব্যাংকটির গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত। যাদের ডিপোজিট রয়েছে তা প্রত্যাহার করার চিন্তাভাবনা করছেন।

ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহক কাজী সাজেদুর রহমান জানান, এই পরিস্থিতি নিয়ে এক ধরনের ভয়ে আছি। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা আছে। ব্যবসার লেনদেন এই ব্যাংকের সঙ্গে। এখন কোনো সমস্যা হয় কিনা সেটা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে। অন্যদিকে শেয়ারবাজারেও এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গতকাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে খুবই কম। ৩০ টাকা মূল্যের শেয়ার মাত্র ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেলেও সেল প্রেসার তুলনামূলক ছিল না। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন অনেকে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবদুল মতিন (অব.), অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, পরিচালক শহিদুল আলম, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব উল আলম প্রমুখ।
৯ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে