শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭, ০১:০০:২২

বিদায় বারাক ওবামা, স্বাগত ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিদায় বারাক ওবামা, স্বাগত ডোনাল্ড ট্রাম্প

সিদ্ধার্থ সিধু : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শপথের মধ্য দিয়ে ৮ বছরের ওবামা যুগের অবসান ঘটলো। শুরু হলো যুগ ডোনাল্ড ট্রাম্প যুগ। ওয়াশিংটন ডিসি-র ন্যাশনাল মলে তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির প্রায় আট লক্ষ মানুষ। প্রথা অনুযায়ী ট্রাম্পকে শপথগ্রহণ করান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।

আব্রাহাম লিঙ্কন যে বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন, সেই বাইবেলে হাত রেখেই শপথ নিলেন ট্রাম্প। তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন মাইক পেন্স। বারাক ওবামার স্থলাভিষিক্ত হলেন ট্রাম্প। তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনের ফল ঘোষণা পর্যন্ত কম বিতর্ক হয়নি। কিন্তু এদিন সব বিতর্ক পিছনে ফেলে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ বুশরাও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

সমাপ্তি ঘটছে আট বছর দায়িত্ব পালন করা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের শাসনামলের। নানা আয়োজনের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে আজ প্রবেশ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প যিনি আজ থেকে আমেরিকার ফার্স্ট লেডির খ্যাতি পাবেন।

এদিকে ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাম্পে সমর্থক এবং বিরোধী হিসেবে অন্তত ৮ লাখ মানুষের সমাগম হয়। গত ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে জয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তার ক্যাবিনেটই আমেরিকার ইতিহাসে সেরা হতে চলেছে। এমন দক্ষ মানুষদের নিয়ে এর আগে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্যাবিনেট তৈরি হয়নি। আর তার ফলে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জিতবেন রিপাবলিকানরাই।

আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার আগে  তার ভাষণে এ কথাই জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কথায়, ''এমন ক্যাবিনেট আমেরিকা এর আগে দেখেনি।''

২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার প্রাক-মুহূর্তে তার সম্মানে আয়োজিত 'ক্যান্ডেললাইট ডিনার'-এ বৃহস্পতিবার ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ''যারা আমার ভোট-প্রচারের বৈতরণী পার হতে সাহায্য করেছেন, অর্থ জুগিয়েছেন, প্রচার-কৌশলের রূপরেখা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছেন, তাদের কথা আমি ভুলতে পারব না। তাদের সাহায্য ছাড়াডা আমি এতটা দূর পর্যন্ত আসতে পারতাম না।''

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ধন্যবাদ জানিয়েছেন আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটারদেরও। আমেরিকার মানচিত্র দেখিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ''যে ভাবে বিভিন্ন স্টেটের ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররা আমাকে সমর্থন করেছেন, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। পপুলার ভোট কম পাওয়ার ফলে আমার যে ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে আমাকে অনেক বেশি এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররাই।

তিনি বলেন, এমন বহু স্টেট ছিল, যেখানে রিপাবলিকানরা আদৌ জেতার আশা করেননি। ওই স্টেটগুলি রিপাবলিকানদের হাতে ছিল বহু দিন আগে, যখন রিপাবলিকান প্রার্থী রোনাল্ড রেগন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ওই স্টেটগুলি চলে গিয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের হাতে। এ বার আমি যে সেগুলি ছিনিয়ে আনতে পেরেছি, তার বেশির ভাগ কৃতিত্বই দাবি করতে পারেন ওই স্টেটগুলির ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটাররা। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছাড়া ওই স্টেটগুলিতে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে আমার জেতা সম্ভব ছিল না।''

প্রত্যয়ী ট্রাম্প এও বলেছেন, ''মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য এখনও পর্যন্ত প্রার্থীরা ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট যত পেয়েছেন, আমি তাদের সবাইকেই ছাপিয়ে যেতে পেরেছি।''

ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে ইতোমধ্যেই। আবার কয়েকটি পদে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তিদের সিনেট শুনানি স্থানীয় সময় শুক্রবার হওয়ার কথা। মনোনীত ও প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে নিন্মলিখিত ব্যক্তিরা রয়েছেন।

রেক্স টিলারসন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী : মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি এক্সনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেক্স টিলারসন। ব্যবসায়িক সূত্রে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে টিলারসনের।

জেনারেল জেমস ম্যাটিস, প্রতিরক্ষামন্ত্রী : ‘ম্যাড ডগ’ জেনারেল ম্যাটিসকেই শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৬৬ বছর বয়সী মার্কিন নৌ-বাহিনীর সাবেক এ জেনারেল ইরাক যুদ্ধের সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন। ‘কাউকে গুলি করা আনন্দের’ এমন মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ম্যাটিস ইরাক ও আফগান যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।

মাইকেল ফিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা : মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল। তিনি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ছিলেন। ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর সাথে কাজ করেছেন ফিন। ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করার রেকর্ড রয়েছে তার।

মাইক পম্পেও, সিআইএ ডিরেক্টর : কানসাসের কংগ্রেসম্যান। সিআইএ’র জিজ্ঞাসাবাদের যেসব পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত সেগুলোর পে অবস্থান ৫২ বছর বয়সী পম্পেওর। রাজনীতিবিদদের কাছে ‘ইন্টেলিজেন্ট’ হিসেবে খ্যাতি আছে তার।

জেফ সেশন্স, অ্যাটর্নি জেনারেল : ১৯৯৭ সাল থেকে আলাবামা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত। পেশাগত জীবনের শুরুতে ফেডারেল জজ হিসেবে মনোনীত হলেও বর্ণবাদের অভিযোগে সিনেটে তা পাস হয়নি।

ড্যান কোটস, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক : সিনেটের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কমিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সব গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে প্রশাসন ও কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহিতার জন্য তার ওপরই আস্থা রেখেছেন ট্রাম্প।
স্টিভেন নুশিন, অর্থমন্ত্রী : অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের সাথে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। হলিউডের খ্যাতিমান একজন প্রযোজক তিনি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার ফিন্যান্স চেয়ারম্যান ছিলেন।

বেটসি ডেভস, শিামন্ত্রী : এ ধনকুবের মিশিগান রিপাবলিকান পার্টির সাবেক সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিমালিকানাধীন শিাব্যবস্থায় তার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

এ ছাড়া জে জন কেলি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী, উইলবার রস বাণিজ্যমন্ত্রী, অ্যান্ড্রিউ পুজডার শ্রমমন্ত্রী, টম প্রাইস স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী, জেসন মিলার যোগাযোগ পরিচালক, সিন স্পাইসার তথ্যমন্ত্রী, রিক পেরি জ্বালানি মন্ত্রী, বেন কারসন গৃহায়ন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, ইলেইন চাও পরিবহন মন্ত্রী, রায়ান জিঙ্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ফরেস্ট লুকাস কৃষিমন্ত্রী, ডেভিড শুলকিন প্রবীণ কল্যাণমন্ত্রী, মাইক মুলভানে বাজেট পরিচালক, নিকি হ্যালে জাতিসঙ্ঘ রাষ্ট্রদূত এবং স্টিফেন ব্যানন ও জ্যারেড কুশনার ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।

২১ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে