নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় টিভি চ্যানেলে আসক্তির ফলে একাধিক শিশু কিশোরের জীবনহানি ঘটেছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, পরকীয়া, তালাক এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে খুন করার ঘটনাও ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূইয়া।
বাংলাদেশে ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি সিনেমা বন্ধ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। বুধবার ছিল রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানির শেষ দিন।শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূইয়া এসব কথা বলেন।
আদালতে তিনি আরও বলেন, ভারতীয় এই তিনটি টিভি চ্যানেলের প্রভাবে বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে।এর ফলে দেশীয় সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ায়ও ব্যাঘাত ঘটছে।শুনানি শেষে ওই তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া। স্টার জলসা ও স্টার প্লাসের পক্ষে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং জি বাংলার পক্ষে আইনজীবী শামসুল হাসান শুনানি করেন।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি এ মামলার রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।ধারাবাহিক শুনানি শেষে আদালত রায়ের দিন ধার্য করেন। ২০১৪ সালের ২ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পাখি প্রেমে প্রাণ বিসর্জন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ঘরে ঘরে বাড়ছে ভারতীয় ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা। এসব সিরিয়ালপ্রীতির কারণে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রমেই দর্শক হারাচ্ছে।দেশ হারাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিশোরী-তরুণীদের ফ্যাশনেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝে না’ সিরিয়ালের ‘পাখি’র প্রেমে প্রাণ গেল এক যুবক ও মেয়ে শিশুর। ‘পাখি চরিত্রে রূপদানকারী তরুণীর পোশাকের অনুকরণে এবার ‘পাখি’ নামের একটি পোশাক দেশের ঈদ বাজারে জমজমাট ব্যবসা করেছে। ঈদে চড়া মূল্যের এ জামা নতুন স্ত্রীকে কিনে দিতে না পারার ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করেছে একজন।ঈদের আগের দিন বগুড়ার শেরপুরের নন্দতেঘরী গ্রামে শাহীন নামের ওই যুবক আত্মহত্যা করে।
পাখির মরণকামড় থেকে ছাড় পায়নি ১০ বছরের শিশুও। পাখি নামের পোশাক না পেয়ে অভিমানে ঈদের দুদিন আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নূরজাহান নামে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর, ভারতীয় এসব চ্যানেল বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে এই বিষয়ে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের জবাব না দেয়ায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জনস্বার্থে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ চেয়ে রিট করা হয় বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবীরা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবর সংযুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী।রিটে উল্লেখ করা হয়, ২০০৬ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইনের কতিপয় ধারা লঙ্ঘনের মাধ্যমে এসব চ্যানেল বাংলাদেশে প্রচারিত হচ্ছে। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর ভারতীয় এ তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।-জাগোনিউজ
২৬ জানুয়ারি, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ