শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৫৭:৫৫

ফের গভীর হতাশায় বিএনপি

ফের গভীর হতাশায় বিএনপি

নিউজ ডেস্ক : রাজনীতি সবসময় আইন দিয়ে চলে না। কখনো কখনো সৌহার্দ্যের সনদ বহন করে রাজনীতির পতাকা। সংবিধান বা আইনে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির কোনো কথা না থাকলেও  প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান যখন সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেউই তার তেমন কোনো বিরোধিতা করেননি।

সেবার আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি রকিব কমিশন খুঁজে বের করেছিল। এবারও সার্চ কমিটির প্রধান হয়েছেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এবার তার নেতৃত্বাধীন কমিটি কী কমিশন খুঁজে বের করে তার জন্য বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

এবার নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রীতিমতো আগ বাড়িয়েই সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে নানা আলোচনা ছিল। এখনো আছে। ঠিক কারা বিএনপি পরিচালনা করছেন তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দলটির ভেতরে প্রশ্ন রয়েছে। আলোচনা রয়েছে, খালেদার গুলশান কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেন। দলের নীতিনির্ধারকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জানতে পারেন না কোথা থেকে কী হয়ে যায়। তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার পক্ষেও বিএনপিতে শক্তিশালী মত ছিল। রাজনীতির জমিন হারানোর কারণে সংলাপে এক ধরনের স্বস্তি খুঁজছিলো দলটি।

একপর্যায়ে বঙ্গভবন থেকে যখন সংলাপ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তখন প্রকাশ্যেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিল বিএনপি। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকের পরও আত্মবিশ্বাসী ছিল দলটি। নিয়মিতই বিএনপির পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার যখন সার্চ কমিটি গঠিত হয় তখন বিএনপির মধ্যে নেমে এসেছে গভীর হতাশা। দলটির প্রস্তাবের কোনো কিছুই আমলে নেয়া হয়নি সার্চ কমিটিতে। বিএনপির পক্ষ থেকে যে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তাতে অবসরপ্রাপ্ত এবং লাভজনক পদে নেই এমন ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্টের গঠন করা সার্চ কমিটির সদস্যদের সবাই কর্মরত।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগ সরকারের পছন্দের কমিটি। কারণ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য এগুলো সরকারের নিয়োগ। এই কমিটি নিয়ে বিএনপি শুধু হতাশই হয়নি, ক্ষুব্ধও হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রেসিডেন্টের সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগে জাতি আশাবাদী হয়েছিল। কিন্তু গতকাল ঘোষিত সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সরকার আবারো ৫ই জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করতে চায়।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্ব শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিল। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করণের তাগাদা দেয়া হচ্ছিলো। এ অবস্থায় শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পাওয়ার আশা করছিলো বিএনপি। কারণ নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে কারণে নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করে বিএনপি। আগ বাড়িয়ে দেয় সংলাপ প্রস্তাব। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটিতে নিজেদের কোনো চাহিদা পূর্ণ না হওয়ায় হতাশ বিএনপি নেতারা।

তারা মনে করছেন, সরকারের মেসেজ ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড। সরকারের পক্ষ থেকে যে ভবিষ্যতেও কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা করা হবে না বিএনপি নেতারা এখন তা পরিষ্কারই বুঝে গেছেন। যতই আর্জি জানানো হোক, এতে কোনো কাজ হবে না। নির্বাচন কমিশন নিয়ে এখন আর কোনো আশাই করছেন না বিএনপি নেতারা। ফের গভীর হতাশায় পড়েছে বিএনপির রাজনীতি। এমজমিন

২৭ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে