শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭, ০২:৫৮:২৪

সিইসির তালিকায় এক ডজন নাম

সিইসির তালিকায় এক ডজন নাম

গোলাম রাব্বানী : নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম অনুসন্ধানে আজ আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে সার্চ কমিটি। বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে হবে এই বৈঠক। প্রথম দিনে সার্চ কমিটির কর্মপন্থা নির্ধারণসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে বিগত সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নাম নিয়েও নতুন সার্চ কমিটি কাজ করবে বলে জানা গেছে। সার্চ কমিটির একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বৈঠকের প্রথম দিনে কর্মপন্থা নির্ধারণ হবে। এ ক্ষেত্রে বিগত সার্চ কমিটির কর্মপদ্ধতি কী ছিল তাও আলোচনা হবে।

এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশনে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠও। নতুন কমিশন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চায়ের টেবিল থেকে হাট-বাজার সবখানেই একই আলোচনা। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাইছে না সরকারও। নিষ্কলুষ ভাবচ্ছবির লোকদের নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বেশকিছু নাম নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) তালিকায় প্রায় এক ডজন নাম উঠে এসেছে।

এর মধ্যে বেশি গুরত্ব পাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নাম। এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  সাবেক দুই উপাচার্য, সাবেক সচিব ও এই পদমর্যাদার ৮ ব্যক্তির নাম। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী অধ্যাপক, ইসির সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবসহ এই পদমর্যাদার বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম আলোচনায় রয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনর্গঠিতব্য পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে অন্তত একজন নারী নির্বাচন কমিশনার রাখা হচ্ছে এবার।

সার্চ কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, আমাদের কমিটির প্রথম সভার স্থান ও সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। অপর একজন সদস্য বলেছেন, প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের নাম সংগ্রহ কীভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আমরাও হোমওয়ার্ক করছি। বিভিন্ন সূত্র থেকে খোঁজ নিচ্ছি। প্রথম বৈঠকে যেন কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা করা যায়, সে জন্য কিছু কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সার্চ কমিটি কীভাবে কাজ করেছিল, সেটাও আমরা বিবেচনায় রাখব।

জানা গেছে, যেসব দল রাষ্ট্রপতির সংলাপে ‘নতুন কমিশনের’ জন্য নাম প্রস্তাব করেনি তাদের কাছে আবারও নামের তালিকা চাওয়া হতে পারে। এ ছাড়া সাবেক সচিব, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নামের তালিকাও চাওয়া হবে সংশ্লিষ্টদের কাছে। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য নাম প্রস্তাব করবে; তার মধ্য থেকে অনধিক পাঁচ সদস্যের ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত বুধবার সার্চ কমিটি গঠিত হওয়ার পর ১০ কার্য দিবসের মধে?্য নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নামের তালিকা দেবেন তারা।

২০১২ সালের সার্চ কমিটি ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে পাঁচ জনকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান। এদিকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ে রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের যে সার্চ কমিটি করেছেন ওই কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতিতে অন্তত একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নাম প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। যাতে স্পষ্ট হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক এই সংস্থাটিতে একজন নারীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে বিদায় নেবে। তার পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এই নিয়োগ দেবেন। তবে চার যুগেও ওই আইনটি হয়নি। আগের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন। অর্থাৎ সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে।

সার্চ কমিটি যেভাবে লোক বাছাই করে : বিগত সার্চ কমিটি প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জমা দেওয়ার। পরে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সব মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্যসচিবের নামের তালিকা কমিটির কাছে পাঠাতেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধককে অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারকদের নামের তালিকা কমিটিতে পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজ বিবেচনায় যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সংগ্রহ করেন।

যেভাবে বর্তমান কমিশন গঠন হয় : বিগত সার্চ কমিটির আহ্বানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কোনো নাম দেয়নি। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সার্চ কমিটি সভা শেষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জমা দেয়। তাতে কমিশনারের চারটিসহ পাঁচ পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি।   বিগত সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী রকিবউদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেছিল। পাশাপাশি চারজন কমিশনার হিসেবে একজন নারীসহ আটটি নাম সুপারিশ করে।

তারা হলেন—অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও শাহ মো. মনসুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আবদুল মোবারক, সাবেক পুলিশপ্রধান হাদিস উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক নিবন্ধক ফজলুল করিম, সাবেক দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ এবং এনজিও ব্রুতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ। তার মধ্য থেকে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে সিইসি এবং আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

কখন বিদায় বর্তমান ইসির : ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে। সিইসি ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ অফিস করবেন বলে জানান বর্তমান ইসি ও এর সচিবালয়। পাঁচ বছর আগে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও তিন নির্বাচন কমিশনার ৯ ফেব্রুয়ারি এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ টি এম শামসুল হুদা ও একজন নির্বাচন কমিশনার ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দিলেও বিদায় নিয়েছেন ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, আরেকজন নির্বাচন কমিশনার ১৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়ে বিদায় নেন ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান ইসির বিদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদায় অনুষ্ঠানের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিইসির শেষ অফিস।

২৮ জানুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে