নিউজ ডেস্ক : গতকাল ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুর বিজনেস লাইন ডট কমে প্রকাশিত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পথে পশ্চিমবঙ্গ কী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? শীর্ষক একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। নিবন্ধকার এতে ইঙ্গিত করেন যে, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বনিবনা না হওয়ার কারণে তিস্তাচুক্তি হতে বিলম্ব ঘটছে।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, কেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তার কারণ এখন জানা গেছে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরকালে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপর দুবছর কেটে গেছে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্তটি মমতার সঙ্গে দিল্লির অবনতিশীল সম্পর্কের ভিকটিম হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ওই নিবন্ধে আরো তথ্য দেয়া হয় যে, ভারতের কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মমতা সরকারের কার্যক্রমের বিষয়ে তার অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতে জ্বালানি সরবরাহে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া সহায়তার বিষয়ে প্রশংসা করেন।
প্রতীম রঞ্জন বোসের লেখা এ নিবন্ধের শুরুতেই তিনি উল্লেখ করেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশেষ করে সিকিউরিটি ফ্রন্টে সম্ভাবনার পথে পশ্চিমবঙ্গ কী এখন একটি বাধা? তার কথায়, এই প্রশ্নটি সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ সম্মেলনে উচ্চারিত হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব সোসাল অ্যান্ড কালাচারাল স্ট্যাডিজ আয়োজিত এই সম্মেলনে ঢাকার একাধিক বক্তা অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশি ইসলামি কট্টরপন্থিরা সীমান্তজুড়ে আশ্রয়লাভ করছে।
নিবন্ধকারের মতে বিষয়টি গুরুতর। দুদেশের আন্তরিকতা ও মাধুর্যমণ্ডিত আচরণের আড়ালে অনেক ধরনের অনিষ্পন্ন ইস্যু রয়েছে। এরমধ্যে ২০১১ সালে সাবেক মনমোহন সিং সরকারের প্রস্তাবিত তিস্তা পানিচুক্তি রয়েছে। যা কিনা যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করা ছাড়াই সামনে আনা হয়েছিল। এবং যা এখনও অনিষ্পন্ন রয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পরে নরেন্দ্র মোদি সরকার স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করলেও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে ওই প্রস্তাবিত চুক্তি থেকে বস্তুগত লাভ কী হবে তা এখনও পর্যন্ত অস্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি হাইড্রোলোজিক্যাল করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত আলো মুখ দেখেনি বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্ট্যাডিজের পরিচালক শ্রীরাধা দত্ত সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে যে অনুমান করা হয়েছিল, তার থেকে বর্তমানে তিস্তা পানি প্রবাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে।’
কিন্তু বাংলাদেশ ভারতবিরোধী ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজনে ওই চুক্তি বাংলাদেশ সম্পন্ন করতে চাইছে। ভারতবিরোধিতার বিষয়টি বস্তুত পূর্ব পাকিস্তানের দিনগুলোর একটি লিগ্যাসি এবং ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ওই বিরোধিতাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সংঘাত করার পরিবেশকে সহযোগিতা নির্ভর প্রবৃদ্ধিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশে রূপ দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ভারতবিরোধী চক্রের ব্যবহার মুক্ত করেছেন। অনতি বিলম্বে এর যে ফল পাওয়া গিয়েছে তা হলো, উত্তর-পূর্ব ভারতে ব্যাপকভাবে জঙ্গিত্ব হ্রাস পেয়েছে।
এ ধরনের পদক্ষেপের পাশাপাশি বাংলাদেশে অনেক পাকিস্তানপন্থি রাজাকার ’৭১-এর গণহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে নিয়মিত তথ্যের আদান-প্রদানের ফলে জামায়াতে ইসলামের মতো ইসলামি সংগঠনের সক্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়, ‘ওই ধরনের শক্তিসমূহ দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে নেমে পড়েছে।’ এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার একটি মূলভিত্তি (কর্নারস্টোন) তিনি একই সঙ্গে উল্লেখ করেন যে অংশীদারিভিত্তিক সমৃদ্ধি অভিন্ন নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল। মি. আকবরের কথায়, ‘আমাদের সবার স্বার্থ যেখানে স্থিতিশীলতায় সেখানে সন্ত্রাসীদের স্বার্থ বিশৃঙ্খলায় নিহিত। হলি আর্টিজানে পরিচালিত আক্রমণটি ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর।’
সম্মেলনে বাংলাদেশের ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গভর্নন্সেসের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনির খসরু সম্মেলনে উল্লেখ করেন যে, হলি আর্টিজানের হামলার নেপথ্যের অনেকেই ওই হামলার ষড়যন্ত্র ভারতে বসে করেছিলেন। এমজমিন
২৯ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি