নিউজ ডেস্ক : প্রবল পরাক্রমশালী সরকারি দল। চরম দুর্বল বিরোধী শক্তি। নাগরিক সমাজের উধাও হয়ে যাওয়া। চেনা ছকেই এগুচ্ছে রাজনীতি। এরমধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে নয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের আলোচনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে ম্যারাথন সংলাপ করেছেন। এরই মধ্যে সার্চ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তি খোঁজার কাজ শুরু করেছে। যদিও সার্চ কমিটির পাঁচ সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। সরকারি দল অবশ্য এসব প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে নানা সময়ই সরব ছিলেন। কখনো তারা সফল হয়েছেন। কখনোবা ফিরে গেছেন ভাঙা মন নিয়ে। গত কয়েক বছরে অবশ্য অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের প্রভাব কমেছে। সরকারের কড়া নীতিই এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। মন্ত্রীরা প্রায়শই সরব হয়েছেন কূটনীতিকদের নাক গলানো নিয়ে। সর্বশেষ কূটনীতিকরা আলোচনায় এসেছেন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির আবদুল হামিদের সময় চেয়ে।
জাতিসংঘের নেতৃত্বে পশ্চিমা কূটনীতিকরা রাষ্ট্রপতির সময় চাইলেও বঙ্গভবন তাতে সায় দেয়নি এখনো পর্যন্ত। সায় দেয়ার সম্ভাবনাও যে খুব একটা নেই তা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথাতেই অনেকটা স্পষ্ট। কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘সার্চ কমিটির বিষয়ে বিদেশিদের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। বিএনপির কথায় বিদেশিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে বসতে হবে? আমরা কি মেরুদণ্ডহীন জাতি? ওই দিন চলে গেছে। আমাদের দেশে নীতিনির্ধারণ আমরাই করবো।’
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই। সেই নির্বাচনের ছক কেমন হবে সে নিয়েই রাজনীতির অন্দরমহলে হিসাব কষাকষি চলছে। পর্দার আড়ালে কি কোনো সমঝোতা হচ্ছে। নাকি সমঝোতা হয়েই গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে বসে হিসাব মেলাচ্ছেন। রাজনীতিতে অবশ্য এখন তার তেমন কোনো তৎপরতা নেই। জিয়ার মাজারকেন্দ্রিক কিছু আনাগোনা মাঝে মাঝে দেখা যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের। এর বাইরে এক কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিদিন নয়াপল্টনে চোতা হাতে হাজির হন মিডিয়ার সামনে। বিএনপির রাজনীতি বলতে এতোটুকুই। সাংগঠনিক কোনো তৎপরতা নেই। কোথায় ভুল হয়েছিল এ নিয়ে কোনো অনুসন্ধান নেই।
কাদের পরামর্শে বেগম জিয়া সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সে নিয়েও দলটিতে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। এখন আলোচনা চলছে ২০১৯ সালের নির্বাচনে কী হবে। বিএনপির অবশ্য নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প নেই। ক্ষমতায় থাকার সময় হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক রাজনীতির জন্য বিএনপির কড়া সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু এখন কোনো কেন্দ্র থেকে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। কোনো কোনো পর্যবেক্ষক দাবি করেন, জাতীয় পার্টির মতো বিএনপিরও একটি বড় অংশ ম্যানেজ পলিটিক্স করছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কোন্ রূপরেখায় অংশ নেবে বিএনপি। বেগম জিয়া কি নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্য থাকবেন। তার অন্তত দুটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলায় তার সাজা হলে বিএনপি নির্বাচনে কোন্ ফর্মুলায় যাবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন, সংশয়।
অন্যদিকে, রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রায় এক দশকের একক নিয়ন্ত্রণ আরো পোক্ত হয়েছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সব পরিস্থিতিই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা নিয়ে আগে প্রশ্ন থাকলেও এখন তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে জোরেশোরে। নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছুটছেন প্রতিনিয়ত। সংগঠন গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করেছেন তিনি। যদিও দেশের বিভিন্নস্থানে ক্ষমতাসীন দল এবং সহযোগী সংগঠনের ভেতরে ক্ষমতার লড়াইও অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে মাঝে মধ্যেই ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা।
আগামী নির্বাচনে রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি অধ্যায়ের অবসান হতে পারে বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক। যদিও ভোটের রাজনীতিতে এমনিতেই জাতীয় পার্টির এখন আর কোনো অবস্থান নেই। নিজেদের ঘাঁটি বলে পরিচিত এলাকাগুলোতেও এখন ভোট নেই জাতীয় পার্টির। হিসাবের রাজনীতিতে দলটি এখন পর্যন্ত টিকে আছে। তবে ভবিষ্যতে তাও শেষ হয়ে যেতে পারে। নেতাদের হারানোর পর নিজেদের অর্থনৈতিক উৎসও হারাতে শুরু করেছে জামায়াত। বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। সবমিলিয়ে রাজনীতিতে জামায়াতের আর ফেরার সম্ভাবনা তেমন নেই। এমজমিন
২৯ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি