নিউজ ডেস্ক : আপাদমস্তক সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা সরকারের মধ্যম সারির এক আমলা এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দাপুটে কর্মকর্তা। ছাত্রজীবনে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে। ছিলেন ছাত্রদলের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর। বিতর্কিত এ কর্মকর্তা পারিবারিকভাবেও প্রতিক্রিয়াশীল পরিবারের সন্তান। বাবা ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা। গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রামে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক পদে কর্মরত উপসচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তার নাম আবদুর রউফ।
এর আগে তিনি ছিলেন লক্ষ্মীপুরের এডিসি। বিসিএস-১৭ ব্যাচের এ কর্মকর্তাকে নিয়ে তার ব্যাচমেটদের মধ্যেই কানাঘুষা আছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তার পদায়ন নিয়ে বিস্মিত এ ব্যাচের অন্য কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার তদবির করে এ কর্মকর্তাকে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বিষয়টি এখন অনেকেরই জানা।
প্রায় দেড় মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গেই বিষয়টি অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদকে। প্রায় পাঁচ মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুর রউফ দায়িত্ব পেয়েছেন উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সেল (এসআরসিসি) পরিচালক-২-এর। তার নিয়োগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনে। অথচ ছাত্রদল সমর্থিত আবদুর রউফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সাবেক ছাত্রলীগ সমর্থিত একাধিক কর্মকর্তা। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও তাকে দক্ষ কর্মকর্তা প্রমাণের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার মতে, আবদুর রউফ নীরবে সরকারের বিপক্ষেই একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
সূত্রমতে, আবদুর রউফ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ করার সুবাদে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে বিরোধী মহলে। শুধু প্রশাসনের কর্মকর্তারাই নন, আবদুর রউফের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগে বিস্মিত তার স্কুলজীবনের বন্ধুরাও। আবদুর রউফের স্কুলজীবনের বন্ধু মোজাম্মেল হোসেন বর্তমানে শ্যামপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী।
মোজাম্মেল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, কলেজে ভর্তির পর আমি ছাত্রলীগ আর আবদুর রউফ যুক্ত হন ছাত্রদলের রাজনীতিতে। এইচএসসি পাসের পর আমার আর লেখাপড়া হয়নি, রউফ ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময়ের ছাত্রদল নেতা আবদুর রউফ কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ পেলেন? রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি জেনে। রংপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক ও রংপুর মহানগর সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, অনেক আগের ঘটনা। কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রামের আবদুর রউফ তখন রংপুর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আবদুর রউফের বড় ভাই এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত রাজা ডাক্তার হিসেবে। কর্মরত আছেন স্থানীয় নিতাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে।
নিজের ভাই সম্পর্কে রাজা ডাক্তার বলেন, আবদুর রউফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এমএলএম শেষ করেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের অধীনে আইন পেশা শুরু করেন। পরে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। আবদুর রউফের প্রতিবেশী গাড়াগ্রাম বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল কাদের বলেন, রউফের বাবা মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। রংপুর সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় রউফ ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার দীপু প্রতিবেদককে বলেন, আমি যতদূর জানি আবদুর রউফ ছাত্রদল করতেন। তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।-বিডিপ্রতিদিন
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে